ফরেক্স ও শেয়ার মার্কেট দুটি বিভিন্ন ধরণের আর্থিক মাধ্যম যে দুইটি বিশাল আর্থিক বাজার। তাদের মধ্যে কিছু প্রধান পার্থক্য রয়েছে। নিচে ফরেক্স ও শেয়ার মার্কেটের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
ফরেক্স মার্কেট (Forex Market) :
ফরেক্স (FX) হল একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে বিভিন্ন জাতীয় মুদ্রা লেনদেন করা হয়। অর্থাৎ ফরেক্স মার্কেট বিশ্বব্যাপী মুদ্রা বিনিময় ও বিনিময় হার নির্ধারণের বাজারকে (বিকেন্দ্রীভুত এবং ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট-ওটিসি) বোঝায় যেখানে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ক্রয়, বিক্রয় এবং বিনিময় করে থাকে। এটি সবচেয়ে তরল এবং বৃহত্তমবাজার ট্রিলিয়ন ডলারের সাথে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন বিনিময় হচ্ছে।
এখানে একটি উত্তেজনাপূর্ণ দিক হল এটি একটি কেন্দ্রীভূত বাজার নয়; বরং, এটি দালাল, স্বতন্ত্র ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্কের একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক। বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার বাজারগুলি নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, সিঙ্গাপুর, সিডনি, হংকং এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো প্রধান বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্রগুলিতে অবস্থিত। সত্তা বা স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারী হোক না কেন, তারা এই নেটওয়ার্কে মুদ্রা বিক্রি বা কেনার জন্য একটি অর্ডার পোস্ট করে; এবং এইভাবে, তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং অন্যান্য পক্ষের সাথে মুদ্রা বিনিময় করতে পারে। এই ফরেক্স মার্কেট চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে তবে সপ্তাহে পাঁচ দিন, যেকোনো জাতীয় বা আকস্মিক ছুটির দিন ছাড়া।
শেয়ার মার্কেট (Stock Market) :
শেয়ার মার্কেট হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন করা হয়। বাংলাদেশে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে; ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE), যেখানে কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড ট্রেডিং সিস্টেম দ্বারা শেয়ার এবং অন্যান্য আর্থিক সিকিউরিটিজ লেনদেন করা হয়। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC)”। বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানির শেয়ারগুলো প্রাইমারি মার্কেট থেকে ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে তা সেকেন্ডারি মার্কেটে নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে পারেন। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে লভ্যাংশ ও মূলধনী মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
উদাহরণ- কোনো ABC কোম্পানির ১০০ টি শেয়ার আছে তবে আপনি যদি ওই কোম্পানির থেকে একটি শেয়ার ক্রয় করেন তবে আপনি ওই কোম্পানির ১০০ ভাগের একভাগ অংশীদার বা ভাগিদার হয়ে যাবেন । এবার আপনি যদি একটি বড় কোম্পানির শেয়ার বা স্টক কেনেন তবে আপনি ওই কোম্পানির কিছুটা অংশিদার হবেন। যখন কোম্পানির ভ্যালু বাড়বে সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনার শেয়ারের দামও বাড়বে এবং কোম্পানির ভ্যালু কমে এলে আপনার শেয়ারর দামও কমে যায়।
ফরেক্স ও শেয়ার মার্কেটের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ফরেক্স পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুদ্রা বাজার। অন্যদিকে, শেয়ার বাজার ফরেক্স এর তুলনায় অনেক ছোট।
২. ফরেক্স এ আপনি মুদ্রা ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ট্রেড করতে পারবেন। অন্যদিকে, শেয়ার মার্কেটে শুধু বিভিন্ন কোম্পানি শেয়ার ট্রেড করতে পারবেন।
৩. ফরেক্স এ কোন আইটেম বাই করলে সাথে সাথে আপনি সেল করতে পারবেন। অন্যদিকে, শেয়ার আজকে বাই করলে আজ আর সেল করতে পারবেন না।
৪. ফরেক্স এ ব্যালেন্স ০ (শুন্য) হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে, শেয়ারে ০ (শুন্য) হওয়ার সম্ভাবনা নাই
৫. শেয়ার বাজারে শেয়ার এর দাম কমলে শেয়ার হোল্ডার এর লস হয়। অন্যদিকে, ফরেক্স মার্কেটে দাম বাড়লে বাই নিয়ে ও দাম কমলে সেল নিয়ে মুনাফা করা সম্ভব।
৬. ফরেক্স কোন আইটেম আপনি বাই না করে সেল দিতে পারবেন, আর শেয়ারে আপনার কোন আইটেম বাই করলে সেই আইটেমের পরবর্তী সময় সেল দিতে হয়।
৭. ফরেক্স একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা। এই ব্যবসায় বিভিন্ন দেশের মুদ্রার কারেন্সি ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, শেয়ার মার্কেট কোন দেশের আভ্যন্তরীন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শেয়ার বাজারে এগুলো করা যায় না।
৮. ফরেক্স করতে হলে ১ ডলার মূলধন দিয়েও আরম্ভ করা যায়। ফরেক্স এ লাভ বেশি ও মার্কেট খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে ফরেক্স থেকে অপেক্ষাকৃত মুনাফা কম ও বাজার ধীরগতিতে পরিবর্তন হয়।
৯. ফরেক্স মার্কেটের কিছু জনপ্রিয় মুদ্রাজোড়া: USD/JPY, EUR/USD, GBP/USD, AUD/USD, etc. অন্যদিকে, শেয়ার মার্কেটের কিছু জনপ্রিয় কোম্পানি: Apple, Amazon, Microsoft, Google, Tesla, etc.