জীবাশ্ম (Fossil):
জীবাশ্ম এমন নিদর্শন যা বহু পুরোনো প্রাণীর অবশেষ যা থেকে ঐ প্রাণী সম্বন্ধে ধারনা পাওয়া যায় কিন্তু কোন জিবিত প্রাণী পাওয়া যায় না । জীবাশ্ম বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরনের পদার্থ কে বোঝায় । প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ কিংবা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন স্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা অথবা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়।
অধিকাংশ জীবিত প্রাণীকুলেরই জীবাশ্ম সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, অনেক প্রজাতিরই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে যারা পৃথিবীতে বর্তমানে বিলুপ্ত। ৩৪০ কোটি বছর থেকে দশ হাজার বছর পূর্বেকার তুষার যুগের প্রাণী ও উদ্ভিদদেহের ধ্বংসাবশেষ জীবাশ্মরূপে সংরক্ষিত আছে।
জীবন্ত জীবাশ্ম (Living Fossil):
যে সমস্ত জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই যাদের বংশধরেরা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। অথচ এদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় সকল জীবেরা বহুপূর্বে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। সেই সমস্ত জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বা Living Fossil বলে। জীবন্ত জীবাশ্ম মানে কোনো প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম নয়।এরা হল জীবন্ত জীব।
সিলাকান্থ নাকম মাছ, লিমিউলাস বা রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, স্ফেনোডন নামে সরীসৃপ প্রাণী, পেরিপেটাস নামে সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি এবং ইকুইজিটাম, নিটাম ও গিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদগুলি জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।
জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম-এর মধ্যে পার্থক্যঃ
জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম বৈশিষ্ট্যগত কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে অনেকাংশ বৈসাদৃশ্য রয়েছে। নিচে জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম-এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
১। জীবাশ্ম এমন নিদর্শন যা বহু পুরোনো প্রাণীর অবশেষ যা থেকে ঐ প্রাণী সম্বন্ধে ধারনা পাওয়া যায় কিন্তু কোন জিবিত প্রাণী পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই যাদের বংশধরেরা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। অথচ এদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় সকল জীবেরা বহুপূর্বে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। সেই সমস্ত জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
২। পাললিক শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায়। অন্যদিকে, পাললিক শিলার মধ্যে জীবন্ত জীবাশ্ম দেখা যায় না।
৩। জীবাশ্ম প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়। অন্যদিকে, জীবন্ত জীবাশ্ম প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয় না।
৪। জীবাশ্মের উদাহরণ- খোসা, হাড়, প্রাণী বা জীবাণুর পাথরের ছাপ, এক্সোককেলেটন, অ্যাম্বারে সংরক্ষিত বস্তু, পেট্রিফাইড কাঠ, কয়লা, চুল, তেল এবং ডিএনএ অবশিষ্টাংশ। অন্যদিকে, জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ- উদ্ভিদ: ইকুইজিটাম, নিটাম ও গিঙ্কো বাইলোবা। প্রাণী : পেরিপেটাস , লিমুলাস , সিলাকান্থ , স্ফেনোডন , হংসচঞ্চু।