ভগ্নাংশ ও অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য

ভগ্নাংশ (Fraction) এবং অনুপাত (Ratio) দুটিই গণিতের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই পার্থক্যগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

ভগ্নাংশ (Fraction):
ভগ্নাংশ হলো দুটি সংখ্যা, যেগুলোর মধ্যে একটি সংখ্যা (যেমন, উপরের সংখ্যা) একটি অংশ বা ভাগকে প্রকাশ করে এবং অন্যটি (যেমন, নিচের সংখ্যা) সেই ভাগের মোট পরিমাণকে নির্দেশ করে। এটি সাধারণত ab\frac{a}{b}ba​ আকারে লেখা হয়, যেখানে a হলো ভগ্নাংশের অঙ্ক (নমিনেটর), এবং b হলো বিভাজক (ডিনোমিনেটর)। উদাহরণ: 3/4, 5/8

অনুপাত (Ratio):
অনুপাত হলো দুটি বা ততোধিক রাশির মধ্যেকার সম্পর্ক বা তুলনা। এটি দুটি রাশির মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে যে একটি রাশি অন্য রাশির কত গুণ বা কত অংশ। অনুপাত দুটি পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক বা অনুপাতকে নির্দেশ করে। এটি দুটি সংখ্যা বা পরিমাণের তুলনা করে, এবং সাধারণত a : b আকারে লেখা হয়। অনুপাতের মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি একটি পরিমাণ অন্য পরিমাণের তুলনায় কতটা বেশি বা কম। উদাহরণ: 2:3, 5:8

ভগ্নাংশ ও অনুপাতের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ভগ্নাংশ হলো একটি পূর্ণ অংশের কতগুলো সমান ভাগ নেওয়া হয়েছে তার প্রকাশ। এটি লব (Numerator) এবং হর (Denominator) দ্বারা গঠিত। লব হলো কতগুলো ভাগ নেওয়া হয়েছে, আর হর হলো মোট কত ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, অনুপাত হলো দুটি বা ততোধিক রাশির মধ্যেকার সম্পর্ক বা তুলনা। এটি দুটি রাশির মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে যে একটি রাশি অন্য রাশির কত গুণ বা কত অংশ।

২. ভগ্নাংশকে a/b আকারে লেখা হয়, যেখানে ‘a’ হলো লব এবং ‘b’ হলো হর। উদাহরণস্বরূপ, ১/২, ৩/৪, ৫/৮ ইত্যাদি। অন্যদিকে, অনুপাতকে a:b আকারে লেখা হয়, যেখানে ‘a’ এবং ‘b’ হলো দুটি রাশি। উদাহরণস্বরূপ, ২:৩, ৫:৭, ১:৪ ইত্যাদি।

৩. একটি ভগ্নাংশ একটি সম্পূর্ণ বস্তুর অংশ বোঝায়। যেমন, ১/২ মানে হলো একটি বস্তুকে দুই ভাগে ভাগ করে তার এক ভাগ নেওয়া। অন্যদিকে, একটি অনুপাত দুটি ভিন্ন বস্তুর পরিমাণ বা পরিমাপের তুলনা বোঝায়। যেমন, ২:৩ মানে হলো প্রথম বস্তুর পরিমাণ যদি ২ একক হয়, তাহলে দ্বিতীয় বস্তুর পরিমাণ হবে ৩ একক।

৪. ভগ্নাংশ সংখ্যা হিসেবে কাজ করে এবং এটি দ্রব্যমূল্য (quantity) বোঝায়। অন্যদিকে, অনুপাত দুটি বস্তু বা পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে, কিন্তু এটি স্বতন্ত্র সংখ্যা নয়, বরং দুটি পরিমাণের সম্পর্কের একটি বিশ্লেষণ।

৫. ভগ্নাংশ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন – প্রকৃত ভগ্নাংশ (Proper fraction – যেখানে লব হরের চেয়ে ছোট), অপ্রকৃত ভগ্নাংশ (Improper fraction – যেখানে লব হরের চেয়ে বড় বা সমান), মিশ্র ভগ্নাংশ (Mixed fraction – একটি পূর্ণ সংখ্যা এবং একটি প্রকৃত ভগ্নাংশের সমন্বয়) ইত্যাদি।

অন্যদিকে, অনুপাতকে ভগ্নাংশ আকারেও প্রকাশ করা যায়, কিন্তু এর অর্থ ভিন্ন। যেমন, ২:৩ অনুপাতকে ২/৩ হিসেবে লেখা যায়, কিন্তু এখানে ২/৩ একটি সম্পূর্ণ বস্তুর অংশ নয়, বরং দুটি রাশির মধ্যেকার সম্পর্ক।