ফুল (Fruit):
ফুলের গর্ভাশয় নিষিক্ত, পরিপুষ্ট ও পরিণত হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে। অর্থাৎ নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া গর্ভাশয়ে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তার কারণে ধীরে ধীরে গর্ভাশয়টি ফলে পরিণত হয়। ফল শব্দটি বিভিন্ন পরিস্থিতে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন খাবার তৈরিতে এবং আর জীববিজ্ঞানে ব্যবহৃত ফল শব্দটি সমার্থক নয়। ফল বলতে কোন সপুষ্পক উদ্ভিদ, যা বীজ ছড়ায়। এ বীজ গাছে থাকলে তাকে অনেক সময় ফল বলা যায় আবার বীজ ফলের মধ্যও অবস্থান করে তবে সকল বীজই ফল হতে আসে না। আবার কোনো কোন ফল ফুল থেকে নাও হতে পারে।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের মতে ফল এমন অনেক ফলই রান্নায় বা খাবার তৈরিতে সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এগুলো মিষ্টি নয়। এ ধরনের ফলের মধ্যে রয়েছে, টমেটো, বেগুন, মটরশুটি, সিম, ভুট্টা, কুমড়া, লাউ, নানা ধরনের মরিচ এবং মসলা ইত্যাদি।
বীজ (Seed):
নিষেকোত্তর রূপান্তরিত ও পরিস্ফুটিত ডিম্বকই বীজ। কিছু কিছু উদ্ভিদে একে কার্নেল বলা হয়। কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। বীজ উদ্ভিদ জগতের ধারক ও বাহক। বীজই ফসল উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বীজ আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে এবং সাধারণত এতে পরিস্ফূটনরত ভ্রূণের জন্যে সঞ্চিত খাদ্য থাকে। বীজ আবৃতবীজী ও নগ্নবীজী উদ্ভিদে পরিপক্ব ডিম্বকের সফল নিষেক ও মাতৃগাছের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্ধনের ফসল। বীজ তৈরির মাধ্যমে বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হওয়া উদ্ভিদের প্রজনন সম্পন্ন হয় , যেখানে জাইগোট থেকে ভ্রূনের সৃষ্টি হয় এবং ডিম্বাণুর বহিরাবরণ থেকে বীজত্বক সৃষ্টি হয়।
বীজ সপুষ্পক উদ্ভিদের সংখ্যাবৃদ্ধি ও বিস্তারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে আদিমতর মস ও ফার্ণের সাপেক্ষে, যারা বীজের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি করে না। এ ব্যাপারটিকেই সবীজ উদ্ভিদের উষ্ণ ও শীতল – দু ধরনের আবহাওয়াতেই বনভূমি থেকে শুরু করে তৃণভূমি পর্যন্ত সর্বত্রই প্রাধান্য বিস্তার করার কারণ মনে করা হয়। বীজ শব্দটি যা কিছু বপন করা হয় তা বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়, যেমন আলুর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি। সূর্যমুখী এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে বপন করা হয় খোসায় আবৃত বীজ, আর আলুর ক্ষেত্রে বপন করা হয় টিউবার।
ফল এবং বীজের মধ্যে পার্থক্যঃ
ফুলের গর্ভাশয় নিষিক্ত, পরিপুষ্ট ও পরিণত হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে। ফল ও বীজের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১। ফুলের গর্ভাশয় নিষিক্ত, পরিপুষ্ট ও পরিণত হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে। অন্যদিকে, নিষেকোত্তর রূপান্তরিত ও পরিস্ফুটিত ডিম্বকই বীজ।
২। ফলটির বাইরের স্তরটি এক্সোকার্প হয়। অন্যদিকে, বীজের বাইরের স্তরটি হল টেস্টা।
৩। ফল ছাড়াই, বীজ একটি নতুন উদ্ভিদে বিকশিত হতে পারে। অন্যদিকে, বীজ ছাড়াই, এটি একটি নতুন উদ্ভিদকে বৃদ্ধি করতে পারে না।
৪। আদর্শ ফলত্বককে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। যেমন- বহিস্ত্বক, মধ্যত্ত্বক এবং অন্তত্ত্বক। অন্যদিকে, বীজ সাধারণত ভ্রুণ, বীজত্বক এবং কোন কোন সময় পৃথক শস্য নিয়ে গঠিত।
৫। ফল গঠন গুপ্তবীজী উদ্ভিদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে, বীজ গঠন গুপ্তবীজী ও ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য।