মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights):
যখন কতিপয় মানবাধিকাকে কোন দেশের সংবিধানে লিপিবব্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। মৌলিক অধিকারগুলোই মানব অধিকার। তবে এগুলোকে মৌলিক অধিকার বলার কারণ হলো যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বচ্চো আইন বা মৌলিক আইন। ঐ সংবিধানে সংযুজিত অধিকারগুলি মৌলিক আইনের অংশ। এদেরকে বিশেষ সাংবিধানিক আইনে রক্ষা করা হয়। এদেশের পরিবর্তন করতে হলে সয়ং সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হয়।
মৌলিক অধিকার একটি দেশের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয় যা রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে। অন্যভাবে বলা যায়, মৌলিক অধিকার বলতে আমরা সে সব অধিকারকে বুঝি যা কোনও দেশের সংবিধান স্বীকৃত এবং যা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাংবিধানিক নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়।
মানবাধিকার (Human Rights):
একটি মানুষকে সমাজে বেচে থাকার জন্য যে অধিকারের প্রয়োজন পড়ে তাকে মানবাধিকার বলে। সমাজে একেক মানুষের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বিশ্বাস, একেক রকমের হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের যে কোন মানুষ তার বিশ্বাস ও কর্ম অনুযায়ী যে সকল অধিকারের প্রয়োজন তাকে মানবাধিকার বলে। এখানে, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র যাই হোক না কেন সেই অনুযায়ী যে অধিকার তার প্রয়োজন তাই মানবাধিকার। অর্থাৎ সব মানুষের সমান ভাবে বেচে থাকার অধিকার আছে।
বিভিন্ন বর্ণের সাদা-কালো মানুষের বেচে থাকার অধিকার, আছে ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষের বেচে থাকার অধিকার, আছে ভিন্ন রাজনৈতিক মতালম্বি মানুষের সমান ভাবে বেছে থাকার অধিকার।
মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্যঃ
কোন দেশের সংবিধানে লিপিবব্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সংজ্ঞাগত পার্থক্য: সকল মৌলিক অধিকারই মানব অধিকার, সকল মানব অধিকার মৌলিক অধিকার নয়। কেবল মাত্র ঐ সকল অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলা হয় কোন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়।
২। মানবাধিকারের ক্ষেত্র ব্যাপক। অন্যদিকে, মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্র সংক্রিণ।
৩। মৌলিক অধিকারের উৎস হল সংবিধান । অন্যদিকে, মানবাধিকারের উৎস হল আন্তজার্তিক আইন।
৪। মৌলিক অধিকার নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেমন বাংলাদেশের ১৮টি মৌলিক অধিকার। অন্যদিকে, মানবাধিকার নির্দিষ্ট দেশের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
৫। মৌলিক অধিকারগুলি দেশের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। অন্যদিকে, মানবাধিকার সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত নয়।
৬। মৌলিক অধিকার সংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা স্বীকৃত। অন্যদিকে, মানবাধিকার এরূপ স্বীকৃত নয়।
৭। মানবাধিকার পৃথিবীর প্রত্যেকের কাছে সমানভাবে প্রযোজ্য। অন্যদিকে, মৌলিক অধিকারগুলো শুধুমাত্র তার নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য স্বীকৃত।
৮। মৌলিক অধিকারের উৎস মূলতঃ কোনো দেশের সংবিধান। অর্থাৎ কোনো মানবাধিকার যখন সংবিধানে স্থান পায় তখন তাকে মৌলিক অধিকার বলে। অন্যদিকে, মানবাধিকারের উৎস হলো আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয়।