ভূমণ্ডলীয় এবং সমতলীয় জরিপ দুটোই ভূমি এবং তার বৈশিষ্ট্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, ভূমণ্ডলীয় এবং সমতলীয় জরিপ পদ্ধতির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে ভূমণ্ডলীয় এবং সমতলীয় জরিপের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে-
ভূমণ্ডলীয় জরিপ (Geodetic Survey) :
ভূমণ্ডলীয় জরিপ হলো ভূমির আকার, অবস্থান এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের একটি উন্নত পদ্ধতি যেখানে পৃথিবীকে একটি গোলাকার গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে, জরিপকৃত এলাকার আয়তন ১০০ বর্গ মাইল (বা ২৫৯ বর্গ কিলোমিটার) এর বেশি হলে পৃথিবীর বক্রতা বিবেচনা করে জরিপ করা হয়। ভূমণ্ডলীয় জরিপ হলো বড় এলাকার ভূমি জরিপ, মানচিত্র তৈরি, ভূমি উন্নয়ন, খনিজ অনুসন্ধান, সীমানা নির্ধারণ, ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অত্যাধুনিক এবং নির্ভুল পদ্ধতি।
সমতলীয় জরিপ (Plane Survey) :
যে জরিপে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করা হয় না অর্থাৎ ১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃ মিঃ এর কম এলাকার জন্য যে জরিপ পরিচালনা করা হয় তাকে সমতল জরিপ বলে। স্বল্প পরিসর স্থানে পৃথিবীর বক্রতার খুব একটা প্রভাব থাকে না বিধায় সমতল জরিপে সূক্ষতা বজায় থাকে। সমতলীয় জরিপ হলো ছোট এলাকার ভূমি জরিপের জন্য একটি সহজ, দ্রুত এবং কম ব্যয়বহুল পদ্ধতি। তবে, বড় এলাকা, উচ্চ নির্ভুলতা, বা জটিল জরিপের কাজের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। জরিপের উদ্দেশ্য ও ব্যবহার এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির আলোকে জরিপকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে।
ভূমণ্ডলীয় এবং সমতলীয় জরিপের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ভূমণ্ডলীয় জরিপ পদ্ধতিতে, পৃথিবীকে একটি গোলাকার গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই, জরিপের সময় পৃথিবীর বক্রতা এবং এর প্রভাব গুলো বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, সমতলীয় জরিপ পদ্ধতিতে, পৃথিবীকে একটি সমতল পৃষ্ঠ হিসেবে ধরা হয়। তাই, জরিপের সময় পৃথিবীর বক্রতা এবং এর প্রভাব গুলো অবহেলা করা হয়।
২. ভূমণ্ডলীয় জরিপ পদ্ধতিতে, দূরত্ব পরিমাপের জন্য উন্নত সরঞ্জাম এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যা পৃথিবীর বক্রতা বিবেচনা করে। অন্যদিকে,
সমতলীয় জরিপ এই জরিপ পদ্ধতিতে, দূরত্ব পরিমাপের জন্য সাধারণ সরঞ্জাম এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যা পৃথিবীর বক্রতা বিবেচনা করে না।
৩. ভূমণ্ডলীয় জরিপ পদ্ধতি বড় আয়তনের ভূমি জরিপ, মানচিত্র তৈরি, ভূমি উন্নয়ন, খনিজ অনুসন্ধান, এবং সীমানা নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, সমতলীয় জরিপ পদ্ধতি ছোট আয়তনের ভূমি জরিপ, ভবন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, এবং কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৪. ভূমণ্ডলীয় জরিপ পদ্ধতি সমতলীয় জরিপের তুলনায় অনেক বেশি সঠিক। কারণ এটি পৃথিবীর বক্রতা এবং এর প্রভাব গুলো বিবেচনা করে। অন্যদিকে, সমতলীয় জরিপ পদ্ধতি ছোট আয়তনের ভূমি জরিপের জন্য যথেষ্ট সঠিক। তবে, বড় আয়তনের ভূমি জরিপের জন্য এটি তেমন সঠিক নয়।
৫. ভূমণ্ডলীয় জরিপ পদ্ধতি সমতলীয় জরিপের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল। কারণ এটি উন্নত সরঞ্জাম এবং বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন। অন্যদিকে, সমতলীয় জরিপ পদ্ধতি ভূমণ্ডলীয় জরিপের তুলনায় কম ব্যয়বহুল। কারণ এটি সাধারণ সরঞ্জাম এবং সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে।
৬. ভূমণ্ডলীয় জরিপে উচ্চতর প্রযুক্তির উপকরণ যেমন GPS, স্যাটেলাইট ইমেজারি, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, সমতলীয় জরিপে সাধারণ জরিপ যন্ত্র যেমন থিওডোলাইট, টেপ, লেভেল, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।