সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান যা প্রায়শই আমরা শুনি। যদিও উভয়ই জনসেবার সাথে জড়িত, তবে তাদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হয়েছে-

সরকারি প্রতিষ্ঠান (Government Institution) :
যে সকল প্রতিষ্ঠানের সব কিছু সরকার পরিচালনা , নিয়ন্ত্রণ , হস্তক্ষেপ করে সে গুলো হলো সরকারি।সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয় অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিদ্যমান। সরকারি যে কোন আদেশ নিষেধ জারি করলে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকে। তাছাড়া আমরা পিওর সরকারি বা রাজস্বখাতভূক্ত প্রতিষ্ঠান বলতে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেই বুঝে থাকি। তবে কেউ কেউ মনে করেন মাসিক পেনশন চালু রয়েছে সে প্রতিষ্ঠানগুলোই সরকারি প্রতিষ্ঠান। মূলত ব্যাপারটি তেমন নয়, একটি রাষ্ট্রয়ত্ত বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও শর্তসাপেক্ষে পেনশন চালু করা যেতে পারে তাই বলে সেগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। হ্যাঁ একটি কথা স্পষ্ট করে বলা যায় যে, যে সকল প্রতিষ্ঠানের শুরুতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার লেখা থাকে সেগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান। “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” লেখা সম্পর্কিত লোগো এবং লেখাটি কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহৃত হতে পারে। আরও একটি বিষয় পরিস্কার করা যায় যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন প্রথা চালু রয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান (Autonomous Institution) :
যে সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা , নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজস্ব রুলস ও রেগুলেশন রয়েছে ও এগুলোতে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সে গুলো হলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাজেটিং এর জন্য সরকারের উপর নির্ভরশীল হতেও পারে, নাও পারে। কিছু কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ সাপেক্ষে কিছু পদে পেনশন সুবিধা চালু করেছে। তবে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাসিক পেনশন চালু না থাকলেও আনুতোষিক সুবিধা চালু রয়েছে। আরও একটি কথা পরিস্কার যে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” লেখাটি ব্যবহার করতে পারেনা। তাদের নিজস্ব লোগো রয়েছে এবং প্রতিটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বোর্ড বা বডি গঠন করা রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান কোন চেয়ারম্যান সেগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। শর্তসাপেক্ষে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও পেনশন সুবিধা চালু করার বিধান রয়েছে।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সরকারি প্রতিষ্ঠান হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, যে সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা , নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজস্ব রুলস ও রেগুলেশন রয়েছে ও এগুলোতে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না সে গুলো হলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

২. সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি বাজেট থেকে অর্থায়ন করা হয়। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব বোর্ড অফ গভর্নর বা ট্রাস্টি বোর্ড থাকে।

৩. সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত হয়।

৪. সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করলেও, নিজস্ব কার্যপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে।

৫. সরকারি প্রতিষ্ঠান সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে, যখন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকারের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে কাজ করে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছুটা বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয় যাতে তারা তাদের কাজগুলো আরো দক্ষতার সাথে করতে পারে।

৬. সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সরকারি হাসপাতাল ইত্যাদি। অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন বোর্ড ও কর্পোরেশন ইত্যাদি।