মোট জাতীয় উৎপাদন ও নীট জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য

মোট জাতীয় উৎপাদন(Gross National Product):

মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) হলো একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্য বুঝায়। জিএনপি হিসাব করা হয় একটি দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবদান বোঝার জন্য। আপনি যদি নিজ দেশে বা দেশের বাহিরের যেকোনো দেশ থেকে চাকারি বা ব্যবসা করার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে নিয়ে আসেন তাহলে সেই আয় মোট জাতীয় আয় হিসাবে বিবেচিত হবে।

যেমন: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদেশে চাকরি বা ব্যবসা করে অর্জিত অর্থের যে পরিমান বৈধপথে বাংলাদেশে পাঠায় তা বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের অংশ হবে। অর্থাৎ বলা যায় যে, একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় আয় বলে ।

অর্থাৎ- (Gross National Product)জিএনপি পরিমাপ করা যায়ঃ
The formula for GNP = GDP + Net factor income from abroad
অথবা;
GNP = C + I + G + X + Z
এখানে;
C=Consumption
I=investment
G=government
X=net exports
Z=net income earned by domestic residents from overseas investments minus net income earned by foreign residents from domestic investments.

নীট জাতীয় উৎপাদন (Net National Product):

মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) হতে যন্ত্রপাতি, কলকব্জা, কারখানা, বাড়ি ঘর ইত্যাদির ক্ষয়-ক্ষতির ব্যয় বাদ দিয়ে যেটুকুঅবশিষ্ট থাকে তাকে নীট জাতীয় উৎপাদন বলে। উৎপাদন কাজে যন্ত্রপাতি, কলকব্জা, বাড়িঘর প্রভৃতি ব্যবহার করার ফলে তাদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এ জন্য তাদের সংস্কার ও মেরামতের প্রয়োজন হয়। আবার সময়ের সাথে সাথে এ সমস্ত যন্ত্রপাতি, বাড়িঘর ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে অকেজো বা বিকল হয়ে পড়ে।

অতএব, যন্ত্রপাতি, বাড়ি ঘরের সংস্কার এবং এদের মেরামত বাবদ মোট যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তাকেই ‘ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয়’ (Capital Consumption Allowance-CCA) বলে। মোট জাতীয় উৎপাদন হতে মূলধনী দ্রব্যের ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা হল ’নীট জাতীয় উৎপাদন’ ((NNP)।

মোট জাতীয় উৎপাদন ও নীট জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাধারণভাবে আমরা মোট জাতীয় উৎপাদন ও নীট জাতীয় উৎপাদনের ধারণা দুটিকে একই অর্থে বুঝে থাকি। কিন্তু বাস্তবে GNP ও NNP ধারণা দুটির মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ-

১। মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) হলো একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্য বুঝায়। অন্যদিকে মােট জাতীয় উৎপাদন থেকে মূলধন সামগ্রীর ব্যবহারজনিত ব্যয় বা জাতীয় অবচয় ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট জাতীয় উৎপাদন ( NNP ) বলে ।

২। GNP সূত্রাকারে লিখলে পাওয়া যায় GNP = C + I + G + (X-M);
এখানে, C = ভোগ ব্যয়, I = বিনিয়োগ ব্যয়, G = সরকারি ব্যয়, (X-M) = নীট রপ্তানি আয়। অন্যদিকে NNP সূত্রাকারে লিখলে পাওয়া যায় NNP = GNP – CCA বা DC, বা NNP = C + I + G + ( X – M ) – CCA বা DC

৩। মােট জাতীয় উৎপাদনের পরিধি তুলনামূলকভাবে বিস্তৃত। অন্যদিকে নিট জাতীয় উৎপাদনের পরিধি তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ।

৪। কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক নির্দেশনা GNP থেকে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক নির্দেশনা NNP থেকে পাওয়া যায়।

৫। GNP তে মােট বিনিয়ােগ ব্যয় ধরা হয়। যেমন- GNP = C + IG + G + ( x – M ) এক্ষেত্রে IG = মােট বিনিয়ােগ ব্যয়। অন্যদিকে NNP তে নিট বিনিয়ােগ ব্যয় ধরা হয় । যেমন- NNP = C + In + G + ( X – M )। এক্ষেত্রে In = নিট বিনিয়ােগ ব্যয় ।

৬। পরিমাপের দৃষ্টিকোণ থেকে GNP একটি থেকে সহজ ধারণা। অন্যদিকে পরিমাপের দৃষ্টিকোণ থেকে NNP একটি থেকে সহজ কঠিন ধারণা ।

৭। GNP দ্বারা মাথাপিছু আয় নির্ণয় করা হয় না। অন্যদিকে NNP দ্বারা মাথাপিছু আয় নির্ণয় করা হয় । কারণ এর মধ্যে থেকে অবচয় ব্যয় বাদ দেওয়া হয়।

৮। GNP ধারণাটি স্বল্পকালীন বিষয় বিবেচনার জন্য খুবই প্রয়ােজনীয়। অন্যদিকে NNP ধারণাটি দীর্ঘকালীন ধারণা লাভের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।


পার্থক্য ফেসবুক পেজ
অর্থনীতি সংক্রান্ত আরো পার্থক্য পড়ুনঃ Economics

আরোও পার্থক্য পড়ুনঃ যোগান রেখা ও সূচির মধ্যে পার্থক্য, স্বাধীন চলক ও অধীন চলকের মধ্যে পার্থক্য, একমাত্রিক ও দ্বিঘাত অপেক্ষকের মধ্যে পার্থক্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং অপসারণের মধ্যে পার্থক্য, সংকীর্ণ মুদ্রা ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য, মোট, গড় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য, স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য, দামের স্থিতিস্থাপকতা এবং চাহিদার আয়ের স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে পার্থক্য, ইসলামি অর্থনীতি ও প্রচলিত অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য