মোট মুনাফা (Gross profit)ঃ
উদ্যোক্তার মোট বিক্রয়লব্ধ আয় থেকে ব্যক্ত বা স্পষ্ট ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তাকে মোট মুনাফা বলা হয়। উৎপাদনের মালিক বাইরে থেকে উপাদান ক্রয় ও নিয়োগ করতে পারে। সেই উপাদানগুলো জমি, শ্রম ও মূলধন হতে পারে। সেই জমির জন্য খাজনা, শ্রমের মজুরী এবং মূলধনের জন্য সুদ দিতে হয়। কাজেই ব্যক্ত বা স্পষ্ট ব্যয় হিসাবে জমির খাজনা, শ্রমিকের মজুরি ও মূলধনের সুদ গণ্য হয়। একজন সংগঠক তার উৎপাদন ও ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে নির্দিষ্ট সময়ে (যেমন এক বছরে) মোট আয় হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা পায়। তার ব্যক্ত ব্যয় হিসাবে ১২ লক্ষ টাকা ধরা হলো। তাহলে বাকী ৮ লক্ষ টাকা হলো সেই উদ্যোক্তার মোট মুনাফা। কাজেই মোট মুনাফা = মোট বিক্রয় লব্ধ অর্থ বা মোট আয় − মোট ব্যয় (অবচয়সহ বাইরের বিভিন্ন উপকরণ বাবদ ব্যক্ত ব্যয়)। অথাৎ মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট্য থাকে তাকে মোট মুনাফা বলে।
নীট মুনাফা (Net profit)ঃ
উৎপাদনের মালিক বাইরের উপাদান ছাড়াও নিজস্ব উপাদান উৎপাদন ক্ষেত্রে নিয়োগ করতে পারে। সেই নিজস্ব উপাদানগুলোর জন্য মালিক স্পষ্টভাবে ব্যয় না করলেও সেই উপাদানগুলোর পাওনা থাকে। সেই অন্তর্নিহিত পাওনা বাবদ ব্যয় ধরা হলে সেই ব্যয়কে অন্ত র্নিহিত বা অব্যক্ত ব্যয় বলে। মোট মুনাফা থেকে অব্যক্ত ব্যয় বাদ দিলে নীট মুনাফা পাওয়া যায়। উদ্যোক্তার নিজস্ব জমি থাকলে তার খাজনা, নিজস্ব মূলধন খাটালে তার জন্য সুদ এবং নিজের পরিশ্রম বাবদ যে উপার্জন মজুরি হিসাবে হত সেই মজুরি এ সবকে অব্যক্ত ব্যয় বুঝানো হয়। এসব অব্যক্ত ব্যয়কে মোট মুনাফা থেকে বাদ দিলে প্রকৃত অবস্থায় উদ্যোক্তার নীট মুনাফা সম্পর্কে জানা যায়।
একটি উদাহরণ বিবেচনা করা যাক, একজন উদ্যোক্তা উৎপাদন বা ব্যবসা ক্ষেত্রে নিজের জমি ও মূলধন নিয়োগ করলেন এবং সেই সঙ্গে নিজে সেখানে পরিশ্রমও করলেন। উদ্যোক্তা ১০ লক্ষ টাকা মোট মুনাফা হিসাবে বছর শেষে অর্জন করলেন। আপাতদৃষ্টে মুনাফার অংক দেখে মনে হতে পারে যথেষ্ট মুনাফা তিনি অর্জন করেছেন। কিন্তু প্রকৃত চিত্র ভিন্ন হতে পারে। যেমন সেই ব্যবসায়ী নিজের জমি অন্য কাউকে ভাড়া দিলে বছরে দুই লক্ষ টাকা ভাড়া পেতেন। কিন্তু তিনি ভাড়া না দিয়ে নিজের ব্যবসা ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করেন। তাই সেই দুই লক্ষ টাকাকে তার মুনাফা হিসাবে প্রাপ্ত ১০ লক্ষ টাকা থেকে স্বাভাবিকভাবেই বিয়োগ করা প্রয়োজন। একইভাবে নিজের মূলধন অন্য কোথাও খাটালে তিনি বছর শেষে ১ লক্ষ টাকা সুদ হিসাবে পেতেন। কাজেই প্রাপ্ত মোট মুনাফা থেকে তাও বাদ দিতে হবে। আবার যদি তিনি অন্য কোথায় পরিশ্রম করতেন তবে বছর শেষে আরো ৪ লক্ষ টাকা পেতেন। কাজেই মোট মুনাফা থেকে সেই টাকা বাদ দিলে প্রকৃত অবস্থায় তার মুনাফা হয় ৩ লক্ষ টাকা। আর তাই হলো নীট মুনাফা।
মোট মুনাফা ও নীট মুনাফার মধ্যে পার্থক্যঃ
১। মোট মুনাফা ও নীট মুনাফার সংজ্ঞা থেকে প্রাথমিক পার্থক্য জানা যায়। মোট বিক্রয়লব্ধ আয় থেকে মোট ব্যক্ত ব্যয় বাদ দিলে যা পাওয়া যায়, তা হলো মোট মুনাফা। অপরদিকে মোট মুনাফা থেকে মোট অব্যক্ত ব্যয় বাদ দিলে নীট মুনাফা পাওয়া যায়। সুতরাং মোট মুনাফা = মোট বিক্রয়লব্ধ আয় − ব্যক্ত ব্যয়। অপরদিকে নীট মুনাফা = মোট মুনাফা − অব্যক্ত ব্যয়। যেখানে ব্যক্ত ব্যয় = অন্যের জমির জন্য প্রদত্ত খাজনা + নিয়োগকৃত শ্রমিকের মজুরি + অপরের মূলধন ব্যবহার বাবদ সুদ + মূলধনের অবচয়জনিত ব্যয় মেটানোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ। অপরদিকে অব্যক্ত ব্যয় = উদ্যোক্তার নিজের জমি বাবদ খাজনা + নিজস্ব মূলধনের সুদ + নিজস্ব শ্রম বাবদ মজুরি।
২। মোট মুনাফার মধ্যে উদ্যোক্তার নিজের মালিকানাধীন অন্যান্য উপকরণ নিয়োগ বাবদ প্রাপ্ত আয় নিহিত থাকে। অপরদিকে নীট মুনাফার মধ্যে কেবল উদ্যোক্তার ঝুঁকি বহনের পুরস্কার নিহিত থাকে।
৩। মোট মুনাফা একটি প্রসারিত ধারণা। অপরদিকে নীট মুনাফা তারই একটি অংশ। কাজেই মোট মুনাফার তুলনায় নীট মুনাফার পরিমাণ কম থাকে।
৪। মোট মুনাফার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার নিজের দক্ষতা সংক্রান্ত বিষয় যেমন থাকে, তেমনি ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণের দক্ষতাও সেখানে বিবেচনায় রাখতে হয়। অপরদিকে নীট অর্থে মুনাফার মধ্যে কেবল উদ্যোক্তার নিজস্ব দক্ষতাই বিবেচনায় রাখতে হয়। কিন্তু নীট অর্থে মুনাফার মধ্যে কেবল উদ্যোক্তার নিজস্ব দক্ষতাই বিবেচিত হয়।