হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর মধ্যে পার্থক্য

সি ভাইরাসের কথা বলি। সি ভাইরাস হলো নীরব ঘাতক। ঢোকার কমপক্ষে পাঁচ বছর পর দেখা গেছে, মানুষের লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে। তাই সি ভাইরাসের কখনো কখনো লক্ষণ থাকে না। লক্ষণ প্রকাশ পায় তখনই যখন কিছু করার থাকে না। লিভার সিরোসিস, দীর্ঘমেয়াদি লিভারের রোগ বা লিভার ক্যানসার হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কী হবে, হাত-পা ফুলে যাবে, জন্ডিস হবে, রক্তবমি হবে, রক্ত পায়খানা হবে। মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে। ভুল বকবে। আর লিভার ক্যানসার হলে তো কথাই নেই।

বি ভাইরাসের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব জ্বর আসা, পেট ব্যথা করা এগুলো হয়। দুটো ভাইরাসের ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সমস্যা হলো, কোনো মানুষ রক্ত পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন, রক্ত পরীক্ষা করা হলো, বি ভাইরাস বা সি ভাইরাস থাকলে পরে খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, দেখতে হবে। অনেক সময় মানুষ বিভ্রান্তির কারণে আবেগ প্রবণ হয়ে, অনেকে বিভ্রান্তপূর্ণ চিকিৎসা করেন। এর হারবাল চিকিৎসা রয়েছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

অনেক শিক্ষিত লোকও কিন্তু আমরা অপচিকিৎসকের কাছে চলে যাচ্ছি। চিকিৎসা নিচ্ছি, ভাবছি যে বোধ হয় ভালো হয়ে গেল, পরে দেখা গেল যখন জটিলতা হচ্ছে, তখন তারা আমাদের কাছে আসছে। এই জন্য আমাদের রোগটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে।

হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর মধ্যে পার্থক্যঃ
হেপাটাইটিস বি এবং সি হল লিভারের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ভাইরাল সংক্রমণ। উভয় সংক্রমণই গুরুতর হতে পারে এবং যকৃতের সিরোসিস, যকৃতের ক্যান্সার এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) একটি ডিএনএ ভাইরাস। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (HCV) একটি আরএনএ ভাইরাস।

২. ১৯৬৫ সালে এক অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীর রক্তে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। অন্যদিকে, হেপাটাটিস ‘সি’ ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে।

৩. বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি লোক হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত।অন্যদিকে, পৃথিবীতে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৭ থেকে ২০ কোটি।

৪. রক্ত আর স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসটি ছড়ায়। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস ‘সি’ ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে।

৫. হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তমাখা সুইয়ের খোঁচায় ভাইরাসটি সংক্রমণের আশঙ্কা ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস ‘সি’র ক্ষেত্রে তা ৩ শতাংশ।

৬. বৈজ্ঞানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে সংক্রমিত। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’তে আক্রান্ত।

অন্যদিকে, দেশে হেপাটইটিস ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এসব আক্রান্ত রোগীর অনেকেই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে আছেন।

৭. ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আরো অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ। অন্যদিকে, ‘সি’র অবস্থান তার পরপরই।

৮. হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের সন্তানের জন্মের পর পর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৯০ শতাংশ। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাস ছড়ায় না।