হরমোন (Hormone):
হরমোন যে জৈব-রাসায়নিক তরল যা শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয়ে রক্তরস বা ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্রিয়ার পর ধ্বংস প্রাপ্ত হয় তাদের হরমোন বলে। সহজ ভাবে বলা যায় যে, প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড বা স্টেরয়েডধর্মী যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ, জীবদেহের কোনও বিশেষ কোষগুচ্ছ অথবা অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি থেকে স্বল্পমাত্রায় ক্ষরিত হয়ে সাধারণত রক্ত, লসিকা ইত্যাদির মাধ্যমে উত্পত্তি স্থল থেকে দুরে শরীরের কোনও বিশেষ জায়গায় পরিবাহিত হয় এবং সেখানকার কলা-কোষের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে, এবং কাজের শেষে নষ্ট হয়ে যায়, তাকেই হরমোন বলে। হরমোন কথার অর্থ হল ‘জাগ্রত করা’বা ‘উত্তেজিত করা’।
প্রাণী, গাছ এবং ফাঙ্গির সঠিক বৃদ্ধির জন্য হরমোনের প্রয়োজন রয়েছে। উৎপাদিত জায়গা হতে পরিবাহিত হয়ে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার কারনে বিভিন্ন প্রকারের রেনুর শ্রেনীকে হরমোন বলা যায়। যে সমস্ত পদার্থকে হরমোন হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তার মধ্যে রয়েছে স্টেরয়েড জাতীয় যেমন ইসট্রোজেন, অ্যামাইনো এসিড যেমন অক্সিন, আইকোসানয়েড জাতীয় যেমন প্রোস্টাগ্লানডিন, প্রোটিন জাতীয় যেমন ইনসুলিন এবং গ্যাস জাতীয় যেমন ইথাইলিন।
শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও কোষের মধ্যে যোগাযোগ করে হরমোন। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং আচরণিক কাজ যেমন পরিপাক, শ্বাস প্রশ্বাস, ঘুম, দৈহিক বৃদ্ধি, চলাফেরা, প্রজনন ইত্যাদি কাজে হরমোনের ব্যপক ভূমিকা রয়েছে।[২][৩] গাছের মধ্যে হরমোন ব্যপক ক্রিয়া করে থাকে প্রায় সব রকমের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ এবং বয়োবৃদ্ধ হওয়া।
স্নায়ুতন্ত্র (Nerves):
স্নায়ুতন্ত্র প্রাণীদেহের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কাজের সমন্বয় করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে সংকেত প্রদান করে। স্নায়ু টিস্যু অতি ক্ষুদ্র অর্গানিজম রূপে প্রায় ৫৫০-৬০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আবির্ভূত হয়। অধিকাংশ প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান দুটি অংশ আছে -কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র ও প্রান্তীয় স্নায়ু তন্ত্র। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ু দিয়ে গঠিত, যা দীর্ঘ, সরু, নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ, অ্যাক্সন দ্বারা আবৃত। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রকে শরীরের প্রতিটি অংশে সংযোগ করে।
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যঃ
হরমোন যে জৈব-রাসায়নিক তরল যা শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয়। হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। স্নায়ুতন্ত্রগুলি প্রধানত স্নায়ু মধ্যে সংকেত বহন করে। অন্যদিকে, হরমোন অন্তঃস্রাব সিস্টেমের মধ্যে একটি রাসায়নিক সংকেত হিসাবে কাজ।
২। স্নায়ু সংকেতগুলি স্নায়ুর সাথে প্রেরণ করে, এবংকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে, হরমোনগুলি রক্ত প্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রেরণ করা হয় এবং এন্ডোক্রিন গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩। স্বাভাবিকভাবে, হরমোনগুলি প্রভাবের ধীর গতির থাকে। অন্যদিকে, স্নায়ুতন্ত্রের দ্রুত সংক্রমণ হয়।
৪। স্নায়ু সংকেত সাধারণত স্বল্পকালীন হয়। অন্যদিকে, হরমোনীয় প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৫। স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে, খুব কম ধরনের রাসায়নিক সমন্বয়কারীকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটারস জড়িত, যা লক্ষ্যমাত্রা টিস্যুতে কেবল গোপন থাকে। অন্যদিকে, হরমোনের ট্রান্সমিটিশন বিভিন্ন ধরনের হরমোনকে জড়িত করে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি বিভিন্ন, নির্দিষ্ট টিস্যুকে প্রভাবিত করে।