ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং (Implantation bleeding) :
ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং নিজেই গর্ভধারণের উপসর্গ। গর্ভধারণ হয়েছে কি না জানার জন্য যতগুলি লক্ষ্মণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং’ বা গর্ভরোপণের রক্তক্ষরণ। প্রতি তিন জন প্রসূতির মধ্যে এক জনের এই উপসর্গ হয়। সাধারণত ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের ১০-১৪ দিনের মাথায় নিষিক্ত ডিম জরায়ুর গায়ে নিজেকে রোপণ করে। তখন নিষিক্ত ডিমের নড়াচড়ার জন্য জরায়ুর দেওয়ালের রক্তজালিকা ভেঙে হালকা রক্তক্ষরণ হয়। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় এবং এর জন্য চিন্তা করার দরকার নেই। অধিকাংশ সময় এই রক্তক্ষরণ এতটাই কম হয় যে নজরেও আসে না।
তাই গর্ভধারণ হয়েছে কি না জানার জন্য ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং-এর অপেক্ষা করে বসে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আবার অনেকে ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিংকে মাসিক ঋতুস্রাবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন সময়ের আগে হয়ে গিয়েছে ভেবে। সেক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা হওয়া সত্ত্বেও তা অজানা থেকে যায়। আরও অনেকদিন পর যখন সত্যিটা সামনে আসে তখন সন্তানের জন্মগ্রহণের সময় নির্ধারণে (ডিউ ডেট) সমস্যা হয়।
পিরিয়ড (Period) :
প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রকে এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ এই পরিবর্তনের ফলে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে৷ আর এটি মাসিক বা পিরিয়ড নামে পরিচিত। পিরিয়ড নারীদেহের ২৮ দিনের একটি পর্যায়ক্রমিক শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া বোঝায়। প্রথম শুরু হয় ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে। তবে এর আগে নয় বছর বয়সেও হতে পারে। এটা সাধারণত ভৌগোলিক আবহাওয়া, শারীরিক শক্তির উপর নির্ভর করে হয়ে থাকে। তারপর থেকে প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে হয়। এই চক্র আটাশ দিন পর পর বা তার কিঞ্চিৎ আগে বা পরেও হতে পারে। পিরিয়ডকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-
১. মেনোস্ট্রুয়াল পর্যায় এর স্খিতিকাল হলো পাঁচ থেকে সাত দিন বা তিন থেকে চার দিন। এ সময় যোনীপথে রক্তমিশ্রিত রস ক্ষরণ হয়। এতে রক্তের সাথে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অস্খায়ী স্তরের খসে পড়া কোষ কলা এবং কিছু কিছু গ্ল্যান্ডের রস মিশ্রিত থাকে। এ ছাড়া একধরনের টিপিক্যাল পথ থাকে যা থেকে বোঝা যায় এটি মাসিক ঋতুস্রাবের পথে।
২. প্রলিফেরাটিভ পর্যায় এই ফেজ বা সময়ে জরায়ুর অভ্যন্তরে ঝরে যাওয়া কোষ বা কোষের স্তরগুলো ফিমেল হরমোনের প্রভাবে আবার তৈরি হতে শুরু করে।
৩. সিকরেটরি পর্যায় এই সময় জরায়ু বা মাতৃজঠরের অভ্যন্তরের প্রতিটি গ্রন্থি রস নি:সরণের জন্য একেবারে তৈরি হয়ে থাকে। গ্রন্থি ও তার মধ্যবর্তী স্ট্রমা বা টিস্যুতে রস জমে থাকে। যৌনসঙ্গমের ফলস্বরূপ পুরুষের শুক্রাণু কর্তৃক নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে সেটি জরায়ুতে ইমপ্ল্যান্ট (ওশহলথষয়) প্রোথিত হয়। শুরু হয় গর্ভধারণ। যদি নির্দিষ্ট মাসিকের মধ্যে গর্ভধারণ না ঘটে তাহলেই কেবল পরবর্তী মাসিক রজঃস্রাব শুরু হয়।
ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং এবং পিরিয়ডের মধ্যে পার্থক্যঃ
ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং এবং পিরিয়ডের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা কখনও কখনও কঠিন হতে পারে। তবে, কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপনাকে পার্থক্য করতে সাহায্য করতে পারে। তা নিম্নরূপ-
১. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং হলো একটি মহিলা গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এটি তখন ঘটে যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়। এই সংযুক্তির ফলে জরায়ুর রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে সামান্য রক্তপাত হতে পারে।
অন্যদিকে, পিরিয়ড হলো একটি মহিলাদের নিয়মিত ঋতুচক্রের একটি অংশ। এটি তখন ঘটে যখন জরায়ুর প্রাচীরের ভিতরের স্তরটি বেরিয়ে আসে। পিরিয়ডের রক্তপাত সাধারণত ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিংয়ের চেয়ে বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং হলো গর্ভাবস্থা শুরু হওয়ার সময় একটি সাধারণ ঘটনা। অন্যদিকে, পিরিয়ড হলো মহিলাদের আবর্তন চক্রের একটি অংশ, যা সাধারণভাবে প্রতি ২৮ দিনে একবার ঘটে।
৩. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে গর্ভাবস্থা হওয়ার সময়, সড়কিনি আবর্তন এবং গর্ভক্ষতি পুরুষ শিশুকে মাতৃত্ব পূর্বক সংক্রান্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, পিরিয়ডর সময়ে, রক্ত এবং শরীরের অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ একটি নামিত মাসিক পদার্থ হয়।
৪. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং সাধারণভাবে পিরিয়ডের সময় হওয়ার আগে ঘটে এবং তার প্রকার সাধারণভাবে স্পষ্ট এবং লাল বা গাঢ় রঙের হতে পারে। অন্যদিকে, পিরিয়ডর সময়ে সাধারণভাবে রক্তের পরিমাণ এবং রঙ পরিবর্তন হয় এবং এটি আকারগত এবং বৃহত্তর হতে পারে।
৫. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং -এ সাধারণত ব্যথা থাকে না। অন্যদিকে, পিরিয়ডর সময়ে সাধারণত ব্যথা থাকে।
৬. পিরিয়ড সাধারণভাবে নিয়মিত এবং স্থিতিশীল। অন্যদিকে, ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং হলে এটি অস্থির এবং সামান্য সময়ে ঘটতে পারে।