শিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষ্য, প্রকৃতি, এবং উদ্দেশ্যের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য হতে পারে। নিচে শিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
শিল্প (Industry) :
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং একে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। অর্থাৎ প্রকৃতি প্রদত্ত অপরিসীম সম্পদের সবগুলো আমরা অনেক সময় সরাসরি ভোগ করতে পারি না। এ সম্পদকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য নানাবিধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পদের আকৃতিগত কিংবা রূপগত পরিবর্তন সাধন করার প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য যে সব প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় তাকেই শিল্প বলে।
সাধারণভাবে আমরা পণ্য ও সেবার উৎপাদনকে শিল্প হিসেবে অভিহিত করে থাকি। উদাহরণস্বরূপ, বনের একটি বৃহৎ বৃক্ষ সরাসরি কেটে এনে এটিকে বসার আসন হিসেবে ব্যবহার করা যথেষ্ট অসুবিধাজনক। চেয়ার বানানোর জন্য উক্ত গাছটিকে প্রক্রিয়াজাত করে এর আকৃতি পরিবর্তন করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়। এ প্রক্রিয়াই শিল্প।
বাণিজ্য (Commerce) :
ফরাসি শব্দ ‘Komers’ থেকে ইংরেজি ‘Commerce’ শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে, যার অর্থ আদান প্রদান বা বিনিময় করা। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য ক্রয় ও বিক্রয় এবং এদের আনুষঙ্গিক যাবতীয় কার্যাবলিকে বাণিজ্য বলে। এটি ব্যবসায়ের পণ্য বণ্টনসংক্রান্ত শাখা। উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য বণ্টনের পথে অর্থাৎ ভোগকারীদের নিকট পৌছাতে ব্যক্তিগত, স্থানগত, কালগত, ঝুঁকিগত এবং অর্থসংস্থানগত বাধা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ দেখা দেয়।
এসব প্রতিবন্ধকতা যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ করা হয় তাই বাণিজ্য। বাণিজ্য ব্যবসায়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ‘ব্যাংক ও বিমার সাহায্যে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করে উৎপাদনস্থল ও ভোগকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে পণ্য বণ্টন সহজ করে তোলে।
শিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং একে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। অন্যদিকে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য ক্রয় ও বিক্রয় এবং এদের আনুষঙ্গিক যাবতীয় কার্যাবলিকে বাণিজ্য বলে।
২. কৃষিজাত শিল্প, শিল্প, নিষ্কাশন শিল্প, উৎপাদান শিল্প, সেরা পরিবেশক শিল্প, নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি শিল্পের শাখা। অন্যদিকে, বাণিজ্যের শাখা হচ্ছে পন্য বিনময় ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা, ব্যাংকিং ও বিজ্ঞাপন।
৩. শিল্প উৎপাদনের কাজ করে এবং বাণিজ্য বন্টনের কাজ করে থাকে।
৪. শিল্প, বাণিজ্য, প্রত্যক্ষ সেবাকর্ম এবং শিল্প বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি সবই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।
৫. শিল্প রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে থাকে। আর বাণিজ্য ব্যক্তিগত, অর্থগত, সময়গত, ঝুঁক্তিগত, স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে থাকে।