বিভক্তিঃ
বিভক্তি হলো এক গুচ্ছ বর্ণ, যারা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য যে সকল বর্ণ যুক্ত হয়। বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক বোঝাতে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, এই লগ্নকগুলোই বিভক্তি বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদ এর সাথে নামপদ এর সম্পর্ক স্থাপন করে। উদাহরণ: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + ০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে অর্থহীন বিভিন্ন লগ্নক যুক্ত হয়েছে, এগুলোই বিভক্তি।
অনুসর্গঃ
বাংলা ভাষায় দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, চেয়ে, থেকে, উপরে, পরে, প্রতি, মাঝে, বই, ব্যতীত, অবধি, হেতু, জন্য, কারণ, মতো, তবে ইত্যাদি শব্দ কখনো অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে পদরূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয় আবার কখনো কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থবৈচিত্র্য ঘটিয়ে থাকে। এদের অনুসর্গ বলা হয়। যেমন : কেবল আমার জন্য তোমার এ দুর্ভোগ। মনোযোগ দিয়ে শোন, শেষ পর্যন্ত সবার কাজে আসবে।
বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। বাক্যের বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে অন্বয় সাধনের জন্য নামপদ বা ক্রিয়াপদের সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বিভক্তি বলে। অপরদিকে বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলা হয়।
২। বিভক্তি ও অনুসর্গের প্রধান পার্থক্য হলো অনুসর্গের স্বাধীন অর্থ ও স্বাধীন ব্যবহার আছে। অপরদিকে বিভক্তির স্বাধীন অর্থ ও স্বাধীন ব্যবহার নেই।
৩। বিভক্তি পদের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। অপরদিকে অনুসর্গ পদের পরে আলাদা ভাবে বসে।
৪। বিভক্তি কোনো পদ নয়। অপরদিকে অনুসর্গ নিজে এক ধরনের অব্যয় পদ।
৫। বিভক্তি শব্দ ও ধাতু, উভয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে। অপরদিকে অনুসর্গ শুধুমাত্র পদের পরে বসে, ধাতুর পরে বসে না।