Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

যমুনা ও পদ্মা সেতুর মধ্যে পার্থক্য

যমুনা ও পদ্মা সেতুর

যমুনা সেতু (Jamuna Bridge):

যমুনা সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সেতুটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। ১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এটি যমুনা নদীর পূর্ব তীরের ভূঞাপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বে ১১শ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু। যমুনা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে বৃহত্তর এবং প্রবাহিত পানি আয়তানিক পরিমাপের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করে। এটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্য বহুবিধ সুবিধা বয়ে আনে, বিশেষত অভ্যন্তরীন পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত করে। পরবর্তিতে এই সেতুর নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু সেতু।

সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ভূমিকম্প যাতে সহ্য করতে পারে সেজন্য সেতুটিকে ৮০-৮৫ মিটার লম্বা এবং ২.৫ ও ৩.১৫ মিটার ব্যাসের ১২১টি ইস্পাতের খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে। এই খুঁটিগুলো খুবই শক্তিশালী (২৪০ টন) হাইড্রোলিক হাতুড়ি দ্বারা বসানো হয়। সেতুটিতে স্প্যানের সংখ্যা ৪৯ এবং ডেক খণ্ডের সংখ্যা ১,২৬৩। সেতুটির ওপর দিয়ে চার লেনের সড়ক এবং দুইটি রেলট্র্যাক বসানো হয়েছে। যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

পদ্মা সেতু (Padma Bridge):

পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহণ করেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০.১২ মিটার (৪৯২.৫ ফুট) এবং চওড়ায় ২২.৫ মিটার (৭৪ ফুট)। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি (৩.৮২ মাইল)। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু, স্প্যান সংখ্যা ও মোট দৈর্ঘ্য উভয়ের দিক থেকে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু এবং ১২০ মিটার (৩৯০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু। সেতুটি চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যমুনা ও পদ্মা সেতুর মধ্যে পার্থক্যঃ

যমুনা ও পদ্মা সেতুর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুটি সেতুর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যমুনা ও পদ্মা সেতুর মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু। এর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সঙ্গে রয়েছে মূল সেতুতে উঠতে দুই পাশে ১২৮ মিটার ভায়াডাক্ট। অন্যদিকে, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য এর চেয়ে অনেক বেশি। এর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সঙ্গে রয়েছে দুই প্রান্তের ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভায়াডাক্ট।

২। যমুনা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার সে সময়ের বিনিময় হারে এই ব্যয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

৩। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু তৈরি করা হয়েছে কংক্রিট দিয়ে। অন্যদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল স্ট্রাকচার। এছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে পাথর ও কংক্রিট।

৪। যমুনা সেতু একতল বিশিষ্ট। এতে সড়ক পথের পাশ দিয়ে রাখা হয়েছে রেল পথের ব্যবস্থা। আর পদ্মা সেতু একটি দ্বিতল বিশিষ্ট সেতু। এতে ওপরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ। নিচে রয়েছে রেল পথ।

৫। আপাতদৃষ্টিতে যমুনার তুলনায় পদ্মা সেতুতে টোলের পরিমাণ বেশি মনে হলেও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুই সেতুর টোলের পার্থক্য খুবই সামান্য।

Exit mobile version