অক্ষাংশ (Latitude):
ভূগোলে, অক্ষাংশকে বিষুবকের উত্তর বা দক্ষিণের যে কোনও বিন্দুর কৌণিক দূরত্ব হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, অর্থাৎ এটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, যা পৃথিবীতে স্থানগুলি সনাক্ত করতে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অথাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষরেখা বলে। এ অক্ষরেখার উত্তর-প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্ব পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির জন্য এ রেখা বৃত্তাকার, তাই এ রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্ব স্থির করা হয়, নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার অক্ষাংশ ২৩°৪২′০″ উত্তর।
দ্রাঘিমাংশ (Longitude):
প্রাইম মেরিডিয়ান এর পূর্ব বা পশ্চিমে বা স্ট্যান্ডার্ড মেরিডিয়ান এর পশ্চিমে যে কোনও পয়েন্টের কৌণিক দূরত্বকে দ্রাঘিমাংশ বলা হয়। দ্রাঘিমাংশ (Longitude) স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার কেন্দ্রে পূর্বে বা পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠের কোন বিন্দু বিষুব রেখার সাথে উল্লম্ব কোন পরিধির সাথে যে কোণ উৎপন্ন করে তার পরিমাপ। একই দ্রাঘিমাংশের সমস্ত বিন্দুকে নিয়ে যে রেখা পাওয়া যায় তাদের বলে মেরিডিয়ান বা ভূ-মধ্য রেখা। প্রতিটি ভূ-মধ্য রেখা একটি অর্ধবৃত্ত কিন্তু কেউ কারো সমান্তরাল নয়। প্রতিটি রেখা উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে মিলিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে যে ভূ-মধ্য রেখাটি রয়াল অবজারভেটরি, গ্রীনউইচ (লন্ডনের কাছে) এর মধ্যে দিয়ে গেছে সেটিকে শূন্য-দ্রাঘিমাংশ বা প্রামাণ্য ভূ-মধ্য রেখা ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ ঢাকার দ্রাঘিমাংশ ৯০°২২′৩০″ পূর্ব।
অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের মধ্যে পার্থক্য:
অক্ষাংশ অনুভূমিক রেখার সাথে সংকেতগুলি যা নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তর বা দক্ষিণের যে কোনও পয়েন্টের দূরত্বকে উপস্থাপন করে, এর দিকটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে। নিম্নে অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-
১। বিষুবরেখার উত্তর বা দক্ষিণের যে কোনও বিন্দুর কৌণিক দূরত্বকে অক্ষাংশ বলে। অন্যদিকে প্রাইম মেরিডিয়ান এর পূর্ব বা পশ্চিমে বা স্ট্যান্ডার্ড মেরিডিয়ান এর পশ্চিমে যে কোনও পয়েন্টের কৌণিক দূরত্বকে দ্রাঘিমাংশ বলা হয়।
২। অক্ষাংশের দিকটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে যা নিরপেক্ষ রেখার সমান্তরাল। অন্যদিকে দ্রাঘিমাটির দিক দুটি মেরু ছেদ করে উত্তর থেকে দক্ষিণে হয়।
৩। অক্ষাংশকে উপস্থাপন করতে গ্রীক অক্ষর ফাই (ɸ) ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে গ্রীক অক্ষর ল্যাম্বদা (λ) দ্রাঘিমাংশের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
৪। অক্ষাংশের পরিসীমা ০ থেকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশ ০ থেকে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত থাকে।
৫। নিরক্ষীয় থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে সমান্তরাল বৃত্তগুলি অক্ষাংশের সমান্তরাল হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। অন্যদিকে দুটি মেরু থেকে রেফারেন্সের রেখাগুলি দ্রাঘিমাংশের মেরিডিয়ান হিসাবে পরিচিত।
৬। অক্ষাংশ রেখার মোট সংখ্যা ১৮০. অন্যদিকে মোট ৩৬০ টি দ্রাঘিমাংশ লাইন রয়েছে।
৭। অক্ষাংশের সমান্তরালগুলি অসম দৈর্ঘ্যের। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশের মেরিডিয়ান সমান দৈর্ঘ্যের।
৮। অক্ষাংশের রেফারেন্সগুলির রেখাগুলি একে অপরের সাথে সমান্তরাল। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশের রেফারেন্সগুলির রেখাগুলি একে অপরের সমান্তরাল নয়।
৯। অক্ষাংশ তাপ অঞ্চলগুলি যেমন- টরিড অঞ্চল, শিষ্য অঞ্চল এবং ফ্রিজিড অঞ্চলগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশ অঞ্চল অঞ্চলগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
১০। অক্ষাংশের অভিমুখ পূর্ব থেকে পশ্চিম। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশের অভিমুখ উত্তর থেকে দক্ষিণে।
<hr>