অক্ষরেখা (Latitudes):
মানচিত্রের উপর থেকে নিচে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর যে রেখাগুলো বিদ্যমান,তাদের অক্ষরেখা বলে। অক্ষরেখা, বা, অক্ষ বৃত্ত হচ্ছে পৃথিবীর পূর্ব–পশ্চিমকে পূর্ণভাবে আবৃত করে রাখা বিমূর্ত কতগুলো বৃত্তরেখা যা একই অক্ষাংশের সকল স্থানকে সংযুক্ত করে। নিরক্ষরেখার উভয় দিকে সমান্তরাল ভাবে প্রতি 1° অন্তর মোট 178 টি কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা পৃথিবীকে ঘিরে আছে। এই প্রত্যেকটি রেখাকে বলা হয় অক্ষরেখা। পৃথিবীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরেখা হলো নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা, কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি, সুমেরু বৃত্ত ও কুমেরু বৃত্ত রেখা।
দ্রাঘিমারেখা (Longitudes):
ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানে মূলমধ্য রেখার সাথে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে সৃষ্ট কৌণিক দূরত্বকে দ্রাঘিমাংশ বলে। যে কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে দ্রাঘিমাংশ প্রকাশ করা হয়, তাকে দ্রাঘিমা রেখা বলে। অর্থাৎপৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সংযোগকারী কাল্পনিক রেখাসমূহ দ্রাঘিমা রেখা। প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা একেকটি অর্ধবৃত্ত। দ্রাঘিমা রেখাসমূহ পরস্পরের সমদূরত্বে অবস্থিত নয়, অর্থাৎ মেরুদ্বয়ে এই রেখা গুলো পরস্পরের সর্বাপেক্ষা নিকটে অবস্থান করে এবং নিরক্ষরেখা বরাবর সর্বাপেক্ষা দূরে অবস্থান করে।
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে পার্থক্য:
মানচিত্রের উপর থেকে নিচে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর যে রেখাগুলো বিদ্যমান,তাদের অক্ষরেখা বলে। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। একই অক্ষাংশবিশিষ্ট জায়গাগুলিকে কোনাে কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে যুক্ত করলে উৎপন্ন হয় অক্ষরেখা। অন্যদিকে, একই দ্রাঘিমাবিশিষ্ট জায়গাগুলিকে কোনাে কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে যুক্ত করলে সৃষ্টি হয় দ্রাঘিমারেখা।
২। অক্ষরেখাগুলি পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে। অন্যদিকে, দ্রাঘিমারেখাগুলি পৃথিবীকে উত্তর-দক্ষিণে বেষ্টন করে আছে।
৩। অক্ষরেখা এক-একটি পূর্ণবৃত্ত এবং পরস্পর সমান্তরাল। তবে সব অক্ষরেখার পরিধি সমান নয়। অন্যদিকে, দ্রাঘিমারেখা এক-একটি অর্ধবৃত্ত এবং সবার পরিধি সমান। তবে এগুলি পরস্পর সমান্তরাল নয়।
৪। দুই মেরুবিন্দু ছাড়া বাকি সব অক্ষরেখা পূর্ণবৃত্ত, তাই প্রতিটি অক্ষরেখার কোণের সমষ্টি ৩৬০°। অন্যদিকে, দ্রাঘিমারেখাগুলির প্রতিটিই অর্ধবৃত্ত, তাই প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার কোণের সমষ্টি ১৮০°।
৫। অক্ষরেখার মান গণনা করা হয় নিরক্ষরেখা থেকে। অন্যদিকে, দ্রাঘিমারেখার মান গণনা করা হয় মূল মধ্যরেখা থেকে।
৬। অক্ষরেখার মান ০° (নিরক্ষরেখা) থেকে ৯০° উত্তর ও দক্ষিণ (সুমেরু ও কুমেরু বিন্দু) পর্যন্ত গণনা করা হয়। অন্যদিকে দ্রাঘিমারেখার মান ০° (মূল মধ্যরেখা) থেকে ১৮০° পূর্ব ও পশ্চিম (একই দ্রাঘিমারেখা) পর্যন্ত গণনা করা হয়।
৭। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। অন্যদিকে একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়।