Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য

প্রকৃতপক্ষে আইন ও নৈতিকতার উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতার উদ্ভব ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে কতিপয় পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

আইন (Law):
মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয় তাকে আইন বলে। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law যা Lag নামক শব্দ থেকে উদ্ভূত। Lag এর আভিধানিক অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং যা সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্জকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আইন বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়। ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, “আইনের শাসন যেকোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল। সামাজিক জীবনে যে রীতিনীতি বা বিধিবিধান মানুষ মেনে চলে তা হলো সামাজিক আইন।

নৈতিকতা (Morality) :
নৈতিকতা যার অর্থ হলো ভদ্রতা, চরিত্র, উত্তম আচরণ। এটি মূলত উদ্দেশ্য,সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ,উচিত-অনুচিত এর পার্থক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। আবার এটি সেসকল বিষয় হতেও আসতে পারে যেসকল বিষয়কে সমগ্র মানুষ কল্যাণকর হিসেবে আখ্যায়িত করে। নৈতিকতাকে “সঠিকতা” বা “ন্যায্যতা”-ও বলা যায়। রাষ্ট্র মূলত এক নৈতিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের কল্যাণ সাধন এবং বিশেষ করে নৈতিক কল্যাণ সাধন করাই রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড নৈতিকতার পরিপন্থী হওয়া উচিত নয়। নৈতিকতার লক্ষ্য ও সৎ ও ন্যায়বান নাগরিক গড়ে তোলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতিবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সঠিক কল্যাণ সাধন করা।

আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. আইন কেবলমাত্র মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, নৈতিকতা মানুষের বাহ্যিক এবং আত্মিক উভয় প্রকার আচরণ ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।

২. আইন রাষ্ট্রকর্তৃক প্রবর্তিত ও প্রয়োগ হয়ে থাকে। আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তিভোগ করতে হয়। অন্যদিকে, নৈতিক বিধিবিধানের পেছনে সামাজিক অনুমোদন থাকে বলে তা পালিত হয়।

৩. আইন রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। আইন সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত। কোন নির্দিষ্ট আইন অমান্যকারীকে নির্দিষ্ট আইনানুসারে দণ্ডিত করা হয়। অন্যদিকে, নৈতিক বিধি-বিধান রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট নয়। আর এ কারণে এগুলো সুনির্দিষ্ট এবং সুনিশ্চিতও নয়। ব্যক্তিবিশেষের নৈতিকতা ভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন, ভিক্ষুককে ভিক্ষা প্রদান কোন ব্যক্তিবর্গের নিকট নৈতিক কাজ বলে পরিগণিত হতে পারে; আবার এটি অন্যদের নিকট রাষ্ট্রে ভিক্ষাবৃত্তি গর্হিত বলে গণ্য হতে পারে।

৪. রাষ্ট্রীয় আইন অনেক সময় নৈতিকতা বহির্ভুত হওয়া সত্ত্বেও তা পালিত ও কার্যকরী হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তার ডান পাশ দিয়ে গাড়ী চালানো নৈতিকতাবিরোধী কোন কাজ নয়; তবু তা আইনের চোখে ঠিক নয়; এটি বে-আইনী

Exit mobile version