আইনগত অধিকার (Legal Rights):
যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত, সেগুলোকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার। সমাজে সুখ-শান্তিতে বসবাস করার জন্য আমরা সামাজিক অধিকার ভোগ করি। যেমন- জীবন রক্ষার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদি। নির্বাচনে ভোটাধিকার, নির্বাচিত হওয়া এবং সব ধরনের অভাব-অভিযোগ আবেদনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া- এগুলো রাজনৈতিক অধিকার। আবার জীবনধারণ, জীবনকে উন্নত ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার প্রভৃতি হচ্ছে নাগরিকের অর্থনৈতিক অধিকার বলে। এসবই নাগরিকের আইনগত অধিকার।
স্বাভাবিক অধিকারের পরিবর্তে এ সময় উদারনৈতিক চিন্তাবিদগণ অধিকারের আইনগত মতবাদ প্রচার করেন। তাদের মধ্যে Austi, Bentham, Ritchie, Solman প্রমুখ অন্যতম। বেন্থাম দৃঢ়তার সাথে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, “Rights are the fruits of law and law alone.”
নৈতিক অধিকার (Moral Rights):
মানুষের বিবেক ও সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে যে অধিকার আসে তাকে নৈতিক অধিকার বলে। নৈতিক অধিকারের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। যেমন- দুর্বলকে সাহায্য লাভের অধিকার নৈতিক অধিকার। এটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না। যার ফলে এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তা ছাড়া এ অধিকার ভঙ্গকারীকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। নৈতিক অধিকার বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম হতে পারে। মূলত নৈতিক অধিকার হচ্ছে সমাজের ন্যায়বােধ ও বিবেকের দ্বারা সমর্থিত পারস্পরিক দাবি। নৈতিক অধিকারের মতবাদ ব্যক্তির নৈতিক অধিকারগুলাের ওপর অধিক গুরুত্বারােপ করে।
আইনের পরিবর্তে নৈতিক ভিত্তির ওপর অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ মতবাদ বেশি আগ্রহী। এ মতবাদ অনুসারে- ১. সমাজ থেকেই অধিকারের উৎপত্তি হয়। সমাজ মানুষের মঙ্গলের জন্যই অধিকার স্বীকার করে, ২. অধিকারের সঙ্গে কর্তব্য জড়িত থাকে। ব্যক্তিসমাজের একজন হিসেবে অধিকার ভােগ করে।
আইনগত ও নৈতিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্যঃ
আইন ও নৈতিকতা এক বিষয় না হলেও উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আইনগত ও নৈতিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্যগুলাে নিয়ে আলােচিত হলাে-
১। যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত, সেগুলোকে আইনগত অধিকার বলে। অন্যদিকে, মানুষের বিবেক ও সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে যে অধিকার আসে তাকে নৈতিক অধিকার বলে।
২। নৈতিক অধিকারকে মূলত শ্রেণীবিভাগ করা যায় না। এ অধিকার সবসময় নৈতিক অধিকার হিসেবেই সমাজে স্বীকৃত। অন্যদিকে, আইনগত অধিকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত।
৩। ধারণার দিক থেকে আইনগত অধিকার খুবই সুস্পষ্ট। অন্যদিকে, ধারণার দিক থেকে নৈতিক অধিকার তত সুস্পষ্ট নয়।
৪। রাষ্ট্রই হচ্ছে আইনগত অধিকারের মূল উৎস। আইনগত অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমােদিত। এ অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দেয়। অন্যদিকে, নৈতিক অধিকার ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র কোনােরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে না। সুতরাং নৈতিক অধিকারের উৎস বিবেক বা নৈতিকতা।
৫। নৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপের জন্য সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান নেই। এজন্য সমাজ কর্তৃক নিন্দিত হতে হয় এবং বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হতে হয়। অন্যদিকে, আইনগত অধিকার যেহেতু রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, সেহেতু এ ধরনের অধিকারে কাউকে বাধা প্রদান করলে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান করা হয়।
৬। নৈতিক অধিকার মেনে চলার জন্য কোনাে বাধ্যবাধকতা নেই। অন্যদিকে, আইনগত অধিকার মেনে চলার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত আইন আছে এবং তা জনগণ মেনে চলতে বাধ্য থাকে।