বর্ণ (Letters)ঃ
ধ্বনি মানুষের মুখনিঃসৃত বায়ু থেকে সৃষ্ট, তাই এর কোনো আকার নেই। এগুলো মানুষ মুখে উচ্চারণ করে এবং কানে শোনে। ভাষা লিখে প্রকাশ করার সুবিধার্থে ধ্বনিগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কিছু প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নাম বর্ণ। এই বর্ণসমূহের সমষ্টিই হলো বর্ণমালা। বাংলা ধ্বনির মতো বর্ণও তাই দুই প্রকার:
১. স্বরবর্ণ, ২. ব্যঞ্জনবর্ণ।
আমরা জানি যে ধ্বনির লিখিত রূপ হল বর্ণ। বাংলা বর্ণমালায় ১১টি স্বরবর্ণ ও ৩৮টি ব্যঞ্জনবর্ণ আছে।
অক্ষর (syllable)ঃ
অক্ষর হচ্ছে বাগ্যন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ। ইংরেজিতে আমরা যাকে সিলেবল বলে অভিহিত করি, তা-ই অক্ষর। যেমন—‘বন্ধন’ শব্দটিতে বন্ + ধন—এ দুটি অক্ষর আছে। সাধারণ অর্থে অক্ষর বলতে বর্ণ বা হরফ (Letter)-কে বোঝালেও অক্ষর ও বর্ণ পরস্পরের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ নয়। বর্ণ বা হরফ হচ্ছে ধ্বনির লিখিত রূপ বা ধ্বনি-নির্দেশক চিহ্ন বা প্রতীক। ভাষাতাত্ত্বিকরা অক্ষরকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
বর্ণ ও অক্ষরের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। ভাষার ধ্বনিকে লিখিতরূপ দানের জন্য যে প্রতীক ব্যবহার করা হয় তাকে বর্ণ বা হরফ বলে। অন্যদিকে অল্প প্রয়াসে যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একবারে উচ্চারিত হয় তাকে অক্ষর বলে।
২। অক্ষর হচ্ছে ইংরেজিতে যাকে বলে Syllable. সহজ কথায় শব্দ উচ্চারণের সময় আমরা যতটুকু অংশ একবারে উচ্চারণ করি সেটা হচ্ছে অক্ষর। অক্ষরের সম্পর্ক ধ্বনির সাথে, বর্ণের সাথে না।
৩। অক্ষর আর বর্ণ নিয়ে নিয়ে বিভ্রাট ঘটে। কখনো কখনো বর্ণকে অক্ষর বলে। কিন্তু অক্ষর উচ্চারণভিত্তিক, বর্ণ লিপিভিত্তিক। যেমন- বাংলা এই শব্দে দুটো অক্ষর তিনটি বর্ণ আছে। বাং>১+লা>১ দুটি অক্ষর। ব ং ও ল>তিনটি বর্ণ । উল্লেখ্য, অক্ষর দুটি অক্ষরের সমষ্টি।
৪। বর্ণ হলো ধ্বনির লিখিত রুপ। অন্যদিকে অক্ষর উচ্চারণভিত্তিক রুপ।
৫। বর্ণ থাকে লিখিত আকারে । অন্যদিকে অক্ষর থাকে শব্দকারে।