মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ও লিনাক্স কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে তুলনা সব সময়ই এই দুটির ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে থাকে। বর্তমানে ডেস্কটপ ব্যবহারকারীর দিক থেকে উইন্ডোজ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম। অপরদিকে লিনাক্স হচ্ছে সবচেয়ে উন্নত, এবং মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নির্মাতারা এখন লিনাক্সের জন্যেও বিভিন্ন ড্রাইভার সফটওয়্যার তৈরি করেন। দুটি অপারেটিং সিস্টেমই শুধুমাত্র ডেস্কটপ ও পার্সোনাল কম্পিউটারের ক্ষেত্রে নয়, সার্ভার ও এমবেডেড সিস্টেম বাজারেও যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।
উইন্ডোজঃ
কম্পিউটারের সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম এর কথা বলতে গেলে সবার আগেই আসে উইন্ডোজ। উইন্ডোজ কম্পিউটারের একটি সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম (অপারেটিং সিস্টেম) যার দারা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার (Hardware)বা যান্ত্রিক-সরঞ্জাম কে পরিচালনা করা হয়।যেমন আমরা যখন একটি স্মার্ট ফোন ক্রয় করি তাঁর সাথে ব্যাটারি থাকে এবং এর ভিতর আরো অনেক যন্ত্রাংশ রয়েছে, সেই যন্ত্রাংশ গুলোকে বলা হয় হার্ডওয়্যার এবং স্মার্ট ফোনটি আমরা যার মাধ্যমে পরিচালনা করি তাকে বলা হয় প্রোগ্রাম। যেমন আপনারা আইফোন এর কথা সবাই শুনেছেন সেই আই ফোন পরিচালিত হয় আইওএস নামক একটি প্রোগ্রাম দিয়ে ঠিক তেমনি কম্পিউটার এর জন্য রয়েছে উইন্ডোজ নামক প্রোগ্রাম। সর্বাপেক্ষা আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং ব্যবসা সফল সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম হল উইন্ডোজ ৯৫ , এর পরে বের হয় উইন্ডোজ ৯৮, তারপর উইন্ডোজ মি(Me), উইন্ডোজ ২০০০, উইন্ডোজ এক্সপি(XP), উইন্ডোজ ভিস্তা(Vista), উইন্ডোজ ৭ ও সর্বশেষ সিরিজ উইন্ডোজ ১০, তবে এদের মদ্ধে সব চাইতে বহুল প্রচলিত এবং সহজ ভাবে আয়ত্তে আনার উইন্ডোজ হচ্ছে উইন্ডোজ এক্সপি(Xp). তবে বর্তমানে উইন্ডোজ এক্সপির সকল সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা মাইক্রোসফট থেকে ,কাজেই আমরা উইন্ডোজ ৭ নিয়ে সব কিছু শিখবো কেননা বর্তমানে এটিই সবচাইতে জনপ্রিয় সবার কাছে।
লিনাক্সঃ
অনেকে মনে করেন লিনাক্স একটি অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু আসলে লিনাক্স কোন অপারেটিং সিস্টেম নয়, বরং এটি হলো একটি কার্নেল। যা মূলত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। ডেভেলপাররা লিনাক্স কার্নেলের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। তাই আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে লিনাক্স রান করাতে চান তবে এই কার্নেলের উপর লেখা অ্যাপ্লিকেশন বা প্যাকেজ আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। আর লিনাক্সের এই প্যাকেজ গুলোকে বলা হয়ে থাকে ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো। লিনাক্স কার্নেলের উপর বহুত ডিস্ট্রো রয়েছে। এবং সেগুলো বিভিন্ন কাজের জন্য প্রস্তুতকৃত। এই কার্নেল আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের কাজ করার উপযোগী করে গড়ে তোলে। লিনাক্স ডিস্ট্রো প্রত্যেকটি কম্পিউটিং ক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, টুলস, এবং ডেক্সটপ পরিবেশ সরবরাহ করে থাকে। এবং এসকল কাজ লিনাক্স কার্নেলের সাথে একত্রে যুক্ত থাকে ফলে এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমে পরিণত হয়েছে।
এখন কেউ যদি বলে যে সে তার কম্পিউটারে লিনাক্স ব্যবহার করছে, তাহলে এর মানে হলো সে লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করছে এবং সেই কার্নেলের উপর লেখা অ্যাপ্লিকেশন পিসিতে রান করাচ্ছে।
লিনাক্স ওউইন্ডোজএরমধ্যেপার্থক্যঃ
১। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা লিনাক্স এর চেয়ে বেশ সহজ। অনেক সময় নতুন ইউজার বুঝতে না পেরে লিনাক্স এর কোনো অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে নিয়ে পুরো হার্ডডিস্ক নিজের অজান্তেই ফরম্যাট করে ফেলে। তবে উইন্ডোজ এর চেয়ে লিনাক্স এর ইন্সটলেশন সময় খুব কম প্রয়োজন হয়।
২। লিনাক্স কার্ণেল ভিত্তিক প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেম এর লাইসেন্স হলো ওপেন সোর্স অর্থাৎ আপনি নিজের ইচ্ছা মতো এটি ব্যাবহার ও বিতরন করতে পারবেন বিনামূল্যে। অপরদিকে উইন্ডোজ এর লাইসেন্স ক্রয় করে ব্যাবহার করতে হয়। লাইসেন্স এ উল্লেখিত সংক্ষক কম্পিউটার এর চেয়ে বেশি ব্যাবহার করা সম্ভব নয়।
৩। উইন্ডোজ এর জগতে গেম এর যেমন বিস্তার রয়েছে লিনাক্সে ঠিক তেমন না থাকলেও ধিরে ধিরে লিনাক্সেও ভালো ভালো গেম সাপোর্ট শুরু হয়েছে। আর সফটওয়্যার এর দিক থেকে, বেশিভাগ উইন্ডোজ সফটওয়্যার এর ওপেনসোর্স ভার্শন লিনাক্সে পাওয়া যাবে। এরপর কোনো সফটওয়্যার পাওয়া না গেলে লিনাক্সে Wine সফটওয়্যার ব্যাবহার করে যে কোনো উইন্ডোজ সফটওয়্যার লিনাক্সে ব্যাবহার করা সম্ভব।
৪। উইন্ডোজ এর পেইড অনেক সাপোর্ট স্টাফ রয়েছে যে কোনো সমস্যায় আপনাকে সমাধান দেওয়ার জন্য। অপর দিকে লিনাক্সে রয়েছে সারা বিশ্বের অসংক্ষ্য স্বেচ্ছাসেবক যারা সর্বদা আপনার যে কোনো সমস্যায় সমাধান দিতে প্রস্তুত।
৫। উইন্ডোজএ আপনি চাইলেও নিজের মতো করে কাস্টমাইজেশন করতে পারবেন না, কিন্তু লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া যায়।
৬। উইন্ডোজ তাদের সার্ভিস এর উন্নতির জন্য কাস্টামারের বিভিন্ন তথ্য নিয়মিত আমাদের জানা- অজানায় নিয়ে থাকে, কিন্তু লিনাক্সে এমন কোনো সমস্যা নেই।