গলদা চিংড়ি (Lobster):
গলদা চিংড়ি মোটা মাথাবিশিষ্ট ও কঠিন খোলসে মোড়ানো এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী।গলদা চিংড়ি স্বাদু পানি ও হালকা লবণযুক্ত পানিতে ভালোভাবে চাষ করা যায়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে স্বাদু পানির দ্রুত বর্ধনশীল চিংড়ির মধ্যে গলদা চিংড়ি অতি পরিচিত। প্রাকৃতিক পরিবেশে গলদা চিংড়ি স্বাদু পানি এবং ঈষৎ লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়। এটি সন্ধিপদী প্রাণী হিসেবে পরিচিত চিংড়ির গোত্রবিশেষ। উচ্চ মূল্যমানের অধিকারী সামুদ্রিক খাদ্য হিসেবে এ ধরনের চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায়শই উপকূলীয় এলাকার অধিবাসীরা অধিক লাভবানের নিমিত্তে এ ধরনের চিংড়ি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ চিংড়ির সম্মুখের পা দুটোর থাবা কাঁকড়ার পায়ের ন্যায় বেশ বড়, চ্যাপ্টা ও সমতূল্য।
অন্যান্য জলজ প্রাণীর ন্যায় শৈশবকালীন সময়ে অনেক প্রজাতির গলদা-চিংড়িও আত্মরক্ষার্থে শরীরের রঙ পরিবর্তন করে থাকে। এর ১০টি হাটার উপযোগী পা রয়েছে। তার মধ্যে সামনের ৩ জোড়া পা থাবার উপযোগী কাঁটাযুক্ত। সামনের পা জোড়া বড় হয়। একাধিক্রমে অন্যান্য জোড়াগুলো একে-অপরের চেয়ে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে।[৪] এছাড়াও, জলজ প্রাণীদের সাথে মিল রেখে এটিও বড়ধরনের দ্বিপাক্ষিক প্রতিসাম্য বজায় রাখে। প্রায়শঃই এরা পরিবর্তনশীল ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি রাজ কাঁকড়ার ন্যায় বিশেষ থাবার অধিকারী।
বাগদা চিংড়ি ( Prawn)
বাগদা চিংড়ি দশপদ বিশিষ্ট চিংড়ি গোত্রীয় প্রাণী। পৃথিবীতে ৭ ধরনের পরিবারের ৫৪০ প্রজাতির বাগদা চিংড়ি রয়েছে। এ ধরনের চিংড়ি সর্বোচ্চ ১৩ ইঞ্চি এবং ওজনে ৪৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। আদর্শ রন্ধনপ্রণালী অনুসরণ করে মনুষ্য খাবার উপযোগী দামী অর্থকরী প্রাণী হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। চিংড়ি তার আবাসস্থলরূপে উন্মুক্ত মৎস্যক্ষেত্রে বিচরণ করে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য এ চিংড়ি খামারেও উৎপাদন করা হয়। বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য।
চিংড়ি আমাদের দেশে একটি পরিচিত মাছ । এটি খেতে যেমন সুস্বাদু এবং এটি দেখতেও সুন্দর । বর্তমানে বাংলাদেশ চিংড়ি রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে । চিংড়িকে আমাদের দেশে সাদা সোনা বলে আখ্যায়িত করা হয় । বাগদা চিংড়ি দশপদ বিশিষ্ট চিংড়ি গোত্রীয় প্রাণী । আমাদের (বাংলাদেশ) দেশে ছোট বড় প্রায় সকলেরই প্রিয় এই মাছ ।
গলদা ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্যঃ
বাগদা চিংড়ি দশপদ বিশিষ্ট চিংড়ি গোত্রীয় প্রাণী। পৃথিবীতে ৭ ধরনের পরিবারের ৫৪০ প্রজাতির বাগদা চিংড়ি রয়েছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. গলদা চিংড়ি প্রধানত মিঠা পানিতে বাস করে। তবে অল্প লোনা জলেও এদের পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বাগদা চিংড়ি প্রধানত সামুদ্রিক অর্থাৎ লোনা জলের চিংড়ি, তবে প্রজনন ঋতুতে এরা অল্প লোনা জলে চলে আসে।
২. গলদা চিংড়ির দেহের বর্ণ স্বচ্ছ সাদাটে। অন্যদিকে, বাগদা চিংড়ির দেহে বাঘের মতো লালচে বাদামি আড়াআড়ি ডোরা থাকে।
৩. গলদা চিংড়ির দেহ প্রস্থচ্ছেদ কিছুটা গোলাকার। অন্যদিকে, বাগদা চিংড়ির দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চ্যাপ্টা।
৪. গলদা চিংড়ির দেহকে সম্পূর্ণভাবে বাঁকানো যায়। অন্যদিকে, বাগদা চিংড়িকে সম্পূর্ণভাবে বাঁকানো যায় না।
৫. গলদা চিংড়ির চলন পদের প্রথম দুই জোড়ায় চিমটা থাকে। অন্যদিকে, বাগদা চিংড়ির চলন পদের প্রথম তিন জোড়ায় চিমটা থাকে।