পদ্ম (Lotus) :
অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে ‘জলজ ফুলের রানি’ বলা হয় পদ্মফুলকে। আগে বর্ষা ও শরৎকালে বিলে-ঝিলে জলের ওপর ফুটে থাকত মনোহরি পদ্মফুল। পদ্ম কন্দ জাতীয় ভূ-আশ্রয়ী বহু বষর্জীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বংশ বিস্তার ঘটে কন্দের মাধ্যমে। পাতা জলের ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। জলের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও রং সবুজ। পাতার বোটা বেশ লম্বা, ভেতর অংশ অনেকটাই ফাঁপা থাকে। ফুলের ডাটার ভিতর অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। ফুল ঊধ্বর্মুখী, মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুটন্ত তাজা ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। ফুল ফোটে রাত্রি বেলা এবং ভোর সকাল থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্ব পযর্ন্ত প্রস্ফুটিত থাকে।
রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুল সংকোচিত হয়ে যায় ও পরবর্তীতে রৌদ্রর প্রখরতা কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। ফুটন্ত ফুল এভাবে বেশ অনেক দিন ধরে সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। পদ্ম ফুলের রং মূলত লাল সাদা ও গোলাপীর মিশ্রণ যুক্ত। কিন্তু দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক জলজ উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগের মতো বিল-ঝিলের জৌলুসতা এখন নেই। এতে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মফুলসহ আরও অনেক জলজ উদ্ভিদ।
উদ্ভিদবিদের মতে, পদ্মর সুবাস শাপলার চেয়ে তুলনামূলক বেশি। তবে দুটোই দু’ধরনের জাত। ফুল ও পাতা আলাদা। পদ্মফুল শাপলা ফুল থেকে আকারে বড়। অপরদিকে পদ্মফুল আকারে ছোট। পাপড়িগুলো চিকন এবং লালচে রঙের। তবে পদ্মফুলে এক জাতীয় ফল হয়। শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত গ্রামীণ জনপদে পদ্মর খোঁজ মেলে। এর বিভিন্ন নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কমল, শতদল, সহস্রদল, মিনাল, পংকজ, মিরজ, শরজ, নলিনি ইত্যাদি।
শাপলা (Water Lily) :
শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaeaceae. সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওড়-বিল ও দিঘিতে এটি বেশি ফোটে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়। শাপলা ফুল আমাদের দেশের পুকুর, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা ও হ্রদে জন্মে। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশেই বেশি দেখা যায়। শাদা শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। এই ফুল অনেক রঙের হলেও শুধুমাত্র শাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।
বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলার জলছাপ আঁকা থাকে। শাদা শাপলা ফুলের অনেক জাত আছে। এই ফুল একসময় অত্যন্ত সুলভ ছিল, এই কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে Nymphaea pubescens শাদা শাপলা ফুলের প্রজাতি বেছে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অধিক জনসংখ্যার কারণে, জলাশয় কমে যাওয়ায় এই উদ্ভিদ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফুল থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশের পুকুর ও হ্রদেও এই ফুল প্রচুর দেখা যায়। শ্রীলংকার জাতীয় ফুলও শাপলা।
পদ্ম ও শাপলা ফুলের মধ্যে পার্থক্যঃ
পদ্ম ও শাপলা ফুল দুটিই জলজ ফুল। এদের দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে তা দেখানো হয়েছ-
১। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে ‘জলজ ফুলের রানি’ বলা হয় পদ্মফুলকে। অন্যদিকে, সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।
২। পদ্ম ফুল সাধারণত শাপলা ফুলের চেয়ে আকারে ছোট হয়। পদ্ম ফুলের ব্যাস সাধারণত ৫-১০ সেমি হয়। অন্যদিকে, শাপলা ফুলের ব্যাস ১০-১৫ সেমি পর্যন্ত হতে পারে।
৩। পদ্ম ফুল বিভিন্ন রঙের হতে পারে, যেমন সাদা, গোলাপি, লাল, নীল, হলুদ ইত্যাদি। অন্যদিকে, শাপলা ফুল সাধারণত সাদা রঙের হয়।
৪। পদ্ম ফুলের পাপড়ি সাধারণত চিকন ও পাতলা হয়। অন্যদিকে, শাপলা ফুলের পাপড়ি সাধারণত পুরু ও মোটা হয়।
৫। পদ্ম ফুলের পাতা সাধারণত বড় ও গোলাকার হয়। অন্যদিকে, শাপলা ফুলের পাতা সাধারণত ছোট ও ডিম্বাকার হয়।
৬। পদ্ম ফুলের স্থায়িত্ব শাপলা ফুলের চেয়ে বেশি হয়। পদ্ম ফুল সাধারণত কয়েক দিন স্থায়ী হয়। অন্যদিকে, শাপলা ফুল সাধারণত একদিনের মধ্যেই ঝরে যায়।
৭। পদ্ম ফুলের সুগন্ধ শাপলা ফুলের চেয়ে বেশি হয়। পদ্ম ফুলের সুগন্ধ অনেক দূর থেকেই পাওয়া যায়।
৮। পদ্ম ফুলের বিভিন্ন উপযোগিতা রয়েছে। এর বীজ খাওয়া যায়। এর পাতা ও কাণ্ড দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য তৈরি করা যায়। এছাড়াও, পদ্ম ফুলকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, শাপলা ফুলেরও বিভিন্ন উপযোগিতা রয়েছে। এর পাতা ও কাণ্ড দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য তৈরি করা যায়। এছাড়াও, শাপলা ফুলকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।