ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য

ম্যাগাজিন (Magazine):

ম্যাগাজিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়। সেই ব্যবধান এক সপ্তাহ , দুই সপ্তাহ বা এক মাসও হতে পারে। অর্থাৎ সাময়িক পত্র, সাময়িকী বা ম্যাগাজিন বলতে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকাশিত এক ধরনের পত্রিকা যা কাগজে বা ইলেক্ট্রনিকভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সাময়িকীগুলিতে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সমাহার থাকে। এটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ক্রয়মূল্য, আগাম প্রদত্ত চাঁদা অথবা এই তিনটির সমন্বয়ে।

ম্যাগাজিন হলো একধরনের সাময়িক প্রকাশনা যা মুদ্রণ অথবা বৈদ্যুতিক মুদ্রণ মাধ্যমে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়-অন্তর প্রকাশিত হয়ে থাকে। ম্যগাজিন নির্ধারিত সময়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তুর প্রকাশ করে। সাধারণত বিজ্ঞাপন, বিনিময় মূল্য, এবং পূর্বে পরিশোধিত সাবস্ক্রিপশন অর্থ, অথবা এই তিনের সমন্বয়ে ম্যাগাজিনের আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে ও ম্যাগাজিন প্রকাশ নিশ্চিত হয়। বুৎপত্তিগত অর্থে, “ম্যাগাজিন” শব্দটি সংগ্রহ বা সংগ্রহস্থল নির্দেশ করে।

তবে, প্রকাশনা মাধ্যমে একে অনুচ্ছেদ বা নিবন্ধের সংগ্রহ বলা হয়ে থাকে।কয়েকটি ম্যাগাজিনের উদাহরণ হল- এখন শান্তিকেতন, দাহপত্র, পিপল, ফ্যামিলি সার্কেল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ওয়াচটাওয়ার, নাটমন্দির, উজানের পথে, উত্তর কাল, কাঞ্চিদেশ প্রভৃতি।

সংবাদপত্র (Newspaper):

সংবাদপত্র সমাজ জীবনের আয়না। সংবাদপত্র হল একটি লিখিত প্রকাশনা যার মধ্যে থাকে বর্তমান ঘটনা, তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, বিভিন্ন ফিচার এবং বিজ্ঞাপন। এটি সাধারণত সাধারণত স্বল্প-মূল্যের কাগজে মুদ্রণ করা হয় যেমন নিউজপ্রিন্ট। পৃথিবীর আধুনিক বিপ্লব ও সংগ্রামের ইতিহাসে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনেক । ২০০৭ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী দৈনিক খবরের কাগজের সংখ্যা ছিল ৬,৫৮০টি যারা একদিনে প্রায় ৩৯৫ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি করত। বর্তমানে বেশীরভাগ সংবাদপত্রই তাদের অনলাইন সংস্করণ বের করে থাকে।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র আমাদের চোখে পরে।যেমন: দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পত্রিকা, পাক্ষিক পত্রিকা, বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মুহূর্তে বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ১০। স্বাধীনতার পরপর কয়েকটি পত্রিকার পরিচালনার ভার সরকারকে বহন করতে হয়েছিল। পাকিস্তান প্রেস ট্রাস্টের পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান (দৈনিক বাংলা) ও দ্য মর্নিং নিউজ এবং মালিকের অনুপস্থিতিতে দ্য পাকিস্তান অবজারভার (দ্য বাংলাদেশ অবজারভার), পূর্বদেশ এবং চিত্রালী সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হতো।

১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন জারির মাধ্যমে সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে সংবাদনির্ভর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিচিত্রা-র প্রকাশনা শুরু হয় দৈনিক বাংলা প্রকাশনী থেকে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদপত্রে নিয়োজিত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য আইন প্রণীত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সরকারিভাবে প্রকাশিত চারটি পত্রিকা ছাড়া সরকার অন্যসব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করে। পত্রিকা চারটি ছিল দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, দ্য বাংলাদেশ অবজারভার ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস।

ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্যঃ

আধুনিক জীবনে ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রের উভয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১। ম্যাগাজিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়। সেই ব্যবধান এক সপ্তাহ , দুই সপ্তাহ বা এক মাসও হতে পারে। অন্যদিকে, সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় প্রতিদিন এমনকি দিনে দুইবারও কোনো কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ।

২। ম্যাগাজিনের আবির্ভাব ঘটে অষ্টাদশ শতকে। অন্যদিকে, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকেই সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে বলে মনে করা হয়।

৩। ম্যাগাজিনগুলির পৃষ্ঠা আকারে ছোটো হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা থাকে। অন্যদিকে, সংবাদপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং তার পৃষ্ঠাগুলি খোলা অবস্থায় থাকে।

৪। ম্যাগাজিন কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে। যথ-শুধু ইতিহাসচর্চার ওপর ভিত্তি করে এবং ইতিহাসের খবরাখবর ও গবেষণা নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো সাময়িকপত্র প্রকাশিত হতে পারে। অন্যদিকে, সংবাদপত্রগুলির অধিকাংশই হয় সার্বিক। সাম্প্রতিক সমস্ত বিষয়ের খবরাখবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত করা হয়।

৫। ম্যাগাজিনের সমকালীন খবরাখবরগুলি ছাড়াও কোনো মৌলিক রচনা বা গবেষণাকর্ম যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত করা হয় । অন্যদিকে, সংবাদপত্রে গবেষণামূলক প্রবন্ধের পরিবর্তে সাম্প্রতিক খবর পরিবেশনই বেশি প্রকাশিত করা হয়।

৬। সংবাদপত্রের উপ-শিরোনাম থাকে না। অন্যদিকে, ম্যাগাজিনের উপ-শিরোনাম থাকে।