সামরিক ও সেনা আইন সাধারনত শান্তি সুশৃঙ্খল রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সামরিক ও সেনা আইনের মধ্যে গুরত্বপূর্ন পার্থক্য রয়েছে। নিচে সামরিক ও সেনা আইনের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
সামরিক আইন (Martial Law) :
জরুরী অবস্থা, সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জনসাধারনের মাঝে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং তাদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হলে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক বাহিনী কর্তৃক সামরিক আইনের মাধ্যমে সামরিক শাসনের প্রয়োগ করাকেই Martial Law বলা হয়। পূর্ববর্তী সরকারের যেকোন ধরনের প্রশাসনিক, আইনি ও বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার বাতিলকরণের মাধ্যমে সামরিক আইন দ্বারা ক্ষমতা দখল করে উক্ত সামরিক প্রধান। সাময়িকভাবে সাধারণ শাসকদের যেকোন ব্যর্থতার কারণে তাদের হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা সামরিক শাসকের হাতে যায় এবং কার্যকরী হয়।
সেনা আইন (Military Law) :
সেনা আইন হলো সেনাবাহিনীর সদস্যদের শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রনীত আইন। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সেনা আইন প্রযোজ্য হয়। সেনা বিভাগের আচরণ নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রচলিত নিয়ম-কানুনকে সেনা আইন (Military Law) বলা হয়। সেনাবাহিনীর বিচারকার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় সেনা আইন দ্বারা।
সামরিক ও সেনা আইনের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সামরিক আইন বলতে বহিরাক্রমন, অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ, দাংগা হাংগামা প্রতিহত করে শান্তি সুশৃঙ্খল রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনী কর্তৃক যে বিশেষ জরুরী অবস্থা জারী করা হয় তাকে সামরিক আইন (Martial Law) বলে।
অন্যদিকে, শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সেনা আইন প্রযোজ্য হয়।সেনা বিভাগের আচরণ নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রচলিত নিয়ম-কানুনকে সেনা আইন (Military Law) বলা হয়।
২. সামরিক আইন কোন সংহিতা বা আইনের সারগ্রন্থ কিংবা আইনের কোন বিধি নয়। সামরিক কর্তৃপক্ষের ঘোষিত কিছু নির্দেশ নির্দেশাবলী। অন্যদিকে, সেনা আইন সৈনিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে অবশ্য পালনীয় সৈনিক বিধি যা লংঘন করলে সুশৃঙ্খল সৈনিক আদালতে বিচার করা হয়।
৩. দেশের চরম সন্ধিক্ষণে এবং বেসামরিক সরকারের ব্যর্থতার কারণে সামরিক আইন জারী করা হয়। ইহা সম্পূর্ণ সাময়িক ব্যবস্থা। অন্যদিকে, সেনা আইন কোন বিশেষ সময় কালের জন্য জারী করা হয় না । যুদ্ধকালীন অবস্থা বা শান্তিকালীন অবস্থা বা শান্তিকালীন অবস্থায় সৈনিকগণ সেনা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
৪. সামরিক আইন হলো এমন একটি সাধারণ আইন যা সৈনিক ও সাধারণ নাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্যদিকে, সেনা আইন কেবল সৈনিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৫. সামরিক আইন জারীর ফলে দেশের সংবিধান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় বা বাতিল করা হয়। অন্যদিকে, সেনা আইন কখনো অকার্যকর হয়ে পড়ে না। কারণ, এটা হলো একটি পরিপূর্ণ আইনের সারগ্রন্থ এবং সামরিক আইন এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।
৬. সামরিক আইন জারীর পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা বিধি লংঘনের জন্য নাগরিককে সামরিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে, সৈনিকগণ তাদের কৃত অপরাধের জন্য সামরিক আইন জারীর পূর্বে বা পরে, সকল সময়েই সৈনিকদের জন্য প্রণীত সেনা আইন মোতাবেক সৈনিক আদালতে বিচার করা হয়।
৭. সামরিক আইনের ভিত্তি দেশের সাধারণ আইন। অন্যদিকে, সেনা আইনের ভিত্তি হচ্ছে আইনসভা বা পার্লামেন্ট।