Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য

যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার

যান্ত্রিক আবহবিকার (Mechanical Weathering)

আবহবিকার (Weathering) শব্দটি এসেছে আবহাওয়া (Weather) থেকে। উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষার, অভিকর্ষ, নদী, বায়ু, জীবজন্তু বা উদ্ভিদ প্রভৃতি নানা প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর যখন ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয়ে মূল শিলার ওপর অবস্থান করে, এবং তার মধ্যে যখন কোনোরকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না, তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার বলা হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের দ্বারা শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় বলে একে প্রাকৃতিক আবহবিকার বলে।

যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে উত্তাপের দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে তুষারের প্রভাব খুব বেশি সেখানে অধিক হয়ে থাকে। সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, শিলার চাপ হ্রাস-বৃদ্ধি এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন সংগঠিত হয়।

রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering):

যখন জলীয় বাষ্প বা জলের মাধ্যমে শিলাসমূহের খনিজ পদার্থ দ্রবীভুত, বিচ্ছিন্ন ও পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে। যে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা গঠনকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলির ওপর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান সমূহ বিশেষ করে অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), জ্বলীয় বাষ্প প্রভৃতির বিক্রিয়ার ফলে কঠিন শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজ পদার্থগুলি নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয়ে মূল শিলা শিথিল হয়ে পড়ে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে । বৃষ্টিবহুল উষ্ণ অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয়।

রাসায়নিক আবহবিকারে শিলার মধ্যবর্তী খনিজ গুলি পরিবর্তিত হয়ে গৌন খনিজে পরিনত হয় বলে সহজেই শিলাসমূহ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্যঃ

যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে বৈশিষ্ট্য গত নানা রূপ পার্থক্য দেখা যায়। এখানে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১। উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষার প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের শিলা সমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হলে তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার বলে। অন্যদিকে, যখন জলীয় বাষ্প বা জলের মাধ্যমে শিলা সমূহের খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত, বিচ্ছিন্ন ও পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে।

২। যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলার শুধু মাত্র আকৃতি গত বা ভৌত পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে, রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে শিলার মৌলিক খনিজ পদার্থ গুলি রূপান্তরিত হয়ে গৌণ বা যৌগিক খনিজ পদার্থে পরিণত হয়।

৩। উষ্ণ মরু ও মরু প্রায় অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি হয়। অন্যদিকে, উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি হয়ে থাকে।

৪। বায়ুর উষ্ণতার পরিবর্তন, চাপ, বায়ুর আর্দ্রতা ও জৈবিক প্রক্রিয়া যান্ত্রিক আবহবিকারের মূল নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। অন্যদিকে, রাসায়নিক আবহবিকারের নিয়ন্ত্রক গুলি হল জল, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড প্রভৃতি।

৫। যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়া গুলি হল শল্কমোচন, প্রস্তর চাই বিচ্ছিন্ন করন, ক্ষুদ্র কনা বিশরন, বোল্ডার ভাঙ্গন প্রভৃতি। অন্যদিকে, রাসায়নিক আবহবিকারের প্রক্রিয়া গুলি হল কারণ, কার্বনেশন, হাইড্রেশন, হাইড্রোলিসিস প্রভৃতি।

৬। যান্ত্রিক আবহবিকারের মাধ্যমে নতুন কোন খনিজ উপাদানের সৃষ্টি হয় না। অন্যদিকে, রাসায়নিক আবহ বিকার প্রক্রিয়ার দ্বারা শিলার মূল খনিজ পরিবর্তিত হয়ে নতুন খনিজের উৎপত্তি ঘটে।

৭। যান্ত্রিক আবহবিকার প্রক্রিয়ায় শিলার চূর্ণ করন অতি দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। অন্যদিকে, রাসায়নিক আবহবিকার দ্বারা শিলার বিয়োজন বা ভাঙনে অধিক সময় ব্যয় হয়। অর্থাৎ এটি ধীর গামী প্রক্রিয়া।

Exit mobile version