স্থানান্তর কৃষি:
সাধারনত বনভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম অধিবাসীগন কোন অঞ্চলের জঙ্গল পুড়িয়ে, জমি পরিষ্কার করে সেই জমির প্রাকৃতিক উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে পরপর দুই তিনবছর ফসল চাষ করার পর সেই স্থান ত্যাগ করে অপর কোন স্থানে একই পদ্ধতিতে জঙ্গল পুড়িয়ে ফসল উৎপাদন করার নামই হল স্থানান্তর কৃষি। এই ধরণের কৃষিকাজ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া; আফ্রিকার কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, জাইরে, দক্ষিন আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে অরন্যাঞ্চলে এবং পার্বত্য অঞ্চলে এখনো দেখা যায়।
স্থায়ী কৃষি:
যে প্রাচীনপন্থী কৃষি ব্যবস্থায় ক্রান্তীয় পাহাড়ি ও মালভূমি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আদিম কৃষিজীবী উপজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা কেবলমাত্র জীবনধারণের প্রয়োজনে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রাচীন ও অনুন্নত প্রথায় বছরের পর বছর একই জমিতে কৃষিকাজ করে, তাকে স্থায়ী কৃষি বলে।
স্থানান্তর কৃষি ও স্থায়ী কৃষির মধ্যে পার্থক্য:
সাধারনত বনভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম অধিবাসীগন কোন অঞ্চলের জঙ্গল পুড়িয়ে, জমি পরিষ্কার করে। স্থানান্তর কৃষি ও স্থায়ী কৃষির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। স্থানান্তর কৃষির পদ্ধতি হয় একটি অতি সুপ্রাচীন উন্নত কৃষি প্রণালী। অন্যদিকে স্থায়ী কৃষির পদ্ধতি হয় অপেক্ষাকৃত উন্নত ও কম প্রাচীন কৃষি প্রণালী।
২। স্থানান্তর কৃষির ব্যবস্থায় একটি জমিতে পরপর 3/4 বার চাষ করার পরে সেই জমি পরিত্যক্ত হয়। অন্যদিকে স্থায়ী কৃষির ব্যবস্থায় একই জমিতে একাধিকবার চাষ করা হয় এবং বহু বছর ধরে চাষ করা হয়।
৩। স্থানান্তর কৃষি জমিগুলি স্থানান্তর কৃষিতে জনবসতি থেকে দূরে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে। অন্যদিকে স্থায়ী কৃষি জমি গুলি স্থায়ী কৃষিতে জনবসতির কাছাকাছি অবস্থান করে।
৪। স্থানান্তর কৃষিতে আদিম যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় এবং ছাই ছাড়া অন্য কোন সার ব্যবহার হয়। অন্যদিকে স্থায়ী কৃষিতে তুলনামূলক উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় এবং কিছু জৈব সার ও রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়।
৫। স্থানান্তর কৃষিতে জমির কোন প্রকার পরিচর্যা করা হয় না। প্রাকৃতিক উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে 2/3 বছর চাষ করা হয়। অন্যদিকে স্থায়ী কৃষির জমিতে জৈবসার দিয়ে এবং শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়ানাে হয়। কখনাে কখনাে কিছুদিনের জন্য চাষবাসহীন অবস্থায় ফেলে রাখা হয় জমির উর্বরতা বাড়ানাের জন্য।