মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময় তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুলদের মুজিজার মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। মুজিজা অর্থ হলো মানুষের বুদ্ধিকে অক্ষমকারী। অর্থাৎ এমন কর্ম সংঘটিত হওয়া, যা মানুষের জ্ঞান ও ক্ষমতা বহির্ভূত। মুজিজা আর জাদু কখনো এক নয়। নিম্নে মুজিজা ও জাদুর পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
মুজিজা (Miracle) :
মুজিজা হলো আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাঁর নবী-রাসুলদের প্রদত্ত এমন অসাধারণ ক্ষমতা বা ঘটনা, যা মানুষের সাধারণ জ্ঞান ও ক্ষমতার বাইরে। এটি নবুওয়তের সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া একটি চিহ্ন। ফেরাউনের সম্প্রদায় ওই সময় জাদুবিদ্যায় পারদর্শী ছিল এবং জ্যোতিষীদের প্রভাব ছিল তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অত্যধিক। তাদের চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী মুসা (আ.)-এর মুজিজাকে তারা বড় ধরনের একটা জাদু ভেবেছিল মাত্র। তবে তারা তাঁকে সাধারণ জাদুকর নয়, বরং ‘বিজ্ঞ জাদুকর’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কারণ তাদের হিসাব অনুযায়ী মুসার জাদু ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, যা তাদের অধীন জাদুবিদ্যার বাইরের এবং যা ছিল অনুপম ও অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
পরবর্তীকালে সুলায়মান (আ.)-এর সময়ে ইরাকের বাবেল নগরী তৎকালীন পৃথিবীতে জাদুবিদ্যায় শীর্ষস্থান লাভ করে। তখন আল্লাহ সুলায়মান (আ.)-কে জিন, ইনসান, বায়ু ও পশুপক্ষীর ওপর ক্ষমতা দিয়ে পাঠান।
জাদু (Magic) :
জাদু, শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে নানা রকম রহস্যময় ঘটনা, অসাধারণ ক্ষমতা এবং অবিশ্বাস্য কৌশল। ইতিহাসের প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ জাদুর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। কিন্তু জাদু আসলে কী? এটি কি সত্যিই অসাধারণ ক্ষমতা, নাকি শুধুমাত্র কৌশল ও চালাকি? অনেক সংস্কৃতিতে জাদুকে অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে যুক্ত করা হয়। ধারণা করা হয় যে, জাদুকরের কাছে এমন কিছু বিশেষ ক্ষমতা থাকে যার মাধ্যমে সে প্রাকৃতিক নিয়মকে উপেক্ষা করে অসাধারণ ঘটনা ঘটাতে পারে। জাদুর ইতিহাস খুবই প্রাচীন। প্রাচীন সভ্যতার মানুষরা জাদুকে বিশ্বাস করত এবং তাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য জাদুকরদের কাছে যেত। আজকের দিনেও অনেক সংস্কৃতিতে জাদু বিশ্বাসের প্রচলন রয়েছে।
মুজিজা ও জাদুর মধ্যে পার্থক্য :
১. ‘মুজিজা’ কেবল নবীগণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয় এবং ‘কারামত’ আল্লাহ তাঁর নেককার বান্দাদের মাধ্যমে কখনো কখনো প্রকাশ করে থাকেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
২. মুজিজা নবীগণের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। অন্যদিকে, জাদু কেবল দুষ্ট জিন ও মানুষের মাধ্যমেই হয়ে থাকে এবং তা হয় অদৃশ্য প্রাকৃতিক কারণের প্রভাবে।
৩. জাদু কেবল পৃথিবীতেই ক্রিয়াশীল হয়, আসমানে নয়। অন্যদিকে, মুজিজা আল্লাহর হুকুমে আসমান ও জমিনে সর্বত্র ক্রিয়াশীল থাকে। যেমন শেষ নবী (সা.)-এর অঙ্গুলি সংকেতে আকাশের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।
৪. মুজিজা মানুষের কল্যাণের জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু জাদু স্রেফ ভেলকিবাজি ও প্রতারণা মাত্র এবং যা মানুষের কেবল ক্ষতিই করে থাকে। জাদুতে মানুষের সাময়িক বুদ্ধি বিভ্রম ঘটে, যা মানুষকে প্রতারিত করে। এ জন্য একে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। মিসরীয় জাতি তথা ফেরাউনের সম্প্রদায় ওই সময় জাদুবিদ্যায় পারদর্শী ছিল এবং জ্যোতিষীদের প্রভাব ছিল তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অত্যধিক। সে কারণ তাদের চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী মুসা (আ.)-এর মুজিজাকে তারা বড় ধরনের একটা জাদু ভেবেছিল মাত্র। তবে তারা তাঁকে সাধারণ জাদুকর নয়, বরং ‘বিজ্ঞ জাদুকর’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল (আ‘রাফ ৭/১০৯)।
কারণ তাদের হিসাব অনুযায়ী মুসার জাদু ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, যা তাদের অধীন জাদুবিদ্যার বাইরের এবং যা ছিল অনুপম ও অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। পরবর্তীকালে সুলায়মান (আ.)-এর সময়ে ইরাকের বাবেল নগরী তৎকালীন পৃথিবীতে জাদুবিদ্যায় শীর্ষস্থান লাভ করে। তখন আল্লাহ সুলায়মান (আ.)-কে জিন, ইনসান, বায়ু ও পশুপক্ষীর ওপর ক্ষমতা দিয়ে পাঠান। এগুলোকে লোকেরা জাদু ভাবে এবং তার নবুয়তকে অস্বীকার করে। তখন আল্লাহ হারুত ও মারুত ফেরেশতাদ্বয়কে জাদু ও মুজিজার পার্থক্য বোঝানোর জন্য পাঠান। যাতে লোকেরা জাদুকরদের তাবেদারি ছেড়ে নবীর তাবেদার হয়।
(সূত্র : নবীদের কাহিনি গ্রন্থ অবলম্বনে)