Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

মাইটোসিস ও মায়োসিসের মধ্যে পার্থক্য

মাইটোসিস ও মায়োসিস

মাইটোসিস (Mitosis):

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নানাবিধ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি প্রকৃত কোষের নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম উভয়ই মাত্র একবার করে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস (mitosis) বলে।

শ্লাইখার (Schleicher, ১৮৭৯) লক্ষ্য করেন, একটি দেহকোষীয় নিউক্লিয়াস বিভক্ত হয়ে দুটি অনুরূপ নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় এবং তিনি এর নাম দেন ক্যারিওকাইনেসিস। পরবর্তীতে ফ্লেমিং (Flemming, ১৮৮২) এ প্রকার বিভাজনকে সম্পূর্ণভাবে মাইটোসিস নামে অভিহিত করেন।

প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দৈহিক কোষে মাইটোসিস ঘটে থাকে। উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশ, যথা- উদ্ভিদের কান্ড বা শাখা প্রশাখার শীর্ষ, মূলের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুল, ভ্রূণমূল, পুষ্পমুকুল, অগ্রমুকুল, বর্ধনশীল পত্র, ক্যাম্বিয়াম ইত্যাদি ভাজক টিস্যুর কোষ এ প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। জীবদেহের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ মাইটোসিস প্রক্রিয়ারই ফল। জননাঙ্গের গঠন ও বৃদ্ধিও মাইটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

মায়োসিস (Meiosis):

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোমসমূহ একবার এবং নিউক্লিয়াস দুবার বিভক্ত হয়, ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা (n) মাতৃকোষের ক্রোমোজোম (2n) সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়, তাকে মায়োসিস বলে।

মায়োসিস একটি বিশেষ ধরণের কোষ বিভাজন, যার মাধ্যমে জনন-মাতৃকোষ হতে জননকোষ উৎপন্ন হয়। গ্রীক শব্দ “meioun” (হ্রাস করা) হতে “meiosis” শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। স্ট্রাসবুর্গার (Strashburger) ১৮৮৩ সালে সর্বপ্রথম মায়োসিস প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। ইহা আবিষ্কৃত হবার বহু বছর পর ফার্মার (J. B. Farmer) ও মুর ((J. E. Moore) ১৯০৫ সালে একে মায়োসিস নাম দেন।

মায়োসিস সর্বদা যৌন জননকারী জীবের জনন মাতৃকোষে তথা মায়োসাইটে (meiocyte) সম্পন্ন হয়। দৈহিক কোষে কখনও মায়োসিস ঘটে না, সর্বদাই ডিপ্লয়েড (2n) সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট কোষে হয়। নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদে [হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদে, (n)] মায়োসিস ঘটে নিষেকের পর জাইগোটে। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদে [ডিপ্লয়েড উদ্ভিদে (2n)] মায়োসিস ঘটে নিষেক ক্রিয়ার পূর্বে অর্থাৎ গ্যামেট সৃষ্টির সময়।

মাইটোসিস ও মায়োসিসের মধ্যে পার্থক্যঃ

মাইটোসিসের প্রধান ফলাফল হল একটি মাতৃকোষের জিনোম দুটি অপত্যকোষে স্থানান্তরিত হওয়া। মাইটোসিস ও মায়োসিসের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নানাবিধ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি প্রকৃত কোষের নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম উভয়ই মাত্র একবার করে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস (mitosis) বলে।

অন্যদিকে, যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোমসমূহ একবার এবং নিউক্লিয়াস দুবার বিভক্ত হয়, ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা (n) মাতৃকোষের ক্রোমোজোম (2n) সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়, তাকে মায়োসিস (Meiosis) বলে।

২। মাইটোসিস হ’ল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুটি অভিন্ন কন্যা কোষ একটি ডাবল (ডিপ্লোডিড) সেটযুক্ত থাকে ক্রোমোজোমের মাদার সেল থেকে গঠিত হয়। অন্যদিকে, বিভাজনেকেবলমাত্র একটি ক্রোমোজোম বিভাগ প্রয়োজনীয় O সামগ্রিকভাবে মাইটোসিসের সম্পূর্ণ জিনগত তথ্য দুটি ডিএনএর আকারে ডিএনএ আকারে বিতরণ করার কাজ রয়েছে এবং তাই কোষের প্রজননের জন্য এটি প্রয়োজনীয়।

৩। মাইটোসিস কোষ বিভাজন জীবের দেহ কোষে ঘটে। অন্যদিকে, মায়োসিস কোষ বিভাজন জীবের জনন কোষে ঘটে।

৪। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় এক বার। অন্যদিকে, মায়োসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের একবার এবং নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় পরপর দুইবার।

৫। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে 2 টি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, মায়োসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।

৬। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। অন্যদিকে, মায়োসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায়।

৭। মাইটোসিস কে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বলা হয়। অন্যদিকে, মায়োসিস কে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন বলে।

Exit mobile version