মাইটোসিস (Mitosis):
মাইটোসিস ও সাইটোকাইনেসিসের প্রধান ফলাফল হল একটি মাতৃকোষের জিনোম দুটি অপত্যকোষে স্থানান্তরিত হওয়া। জিনোম হল নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোমের সমষ্টি। আর ক্রোমোজোম হল দৃঢ়সংলগ্নভাবে পেঁচানো ডিএনএ দ্বারা তৈরি একটি গঠন, যা কোষের সঠিক কার্যক্রমের জন্য জিনগত তথ্য ধারণ করে।[২৭] যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক অপত্যকোষকে জিনগতভাবে মাতৃকোষের সদৃশ হতে হয়, তাই মাইটোসিস শুরুর পূর্বেই মাতৃকোষ তার প্রত্যেক ক্রোমোজোমের একটি করে অনুলিপি তৈরি করে। এ ঘটনাটি ঘটে ইন্টারফেজ পর্যায়ের S ফেজে। ক্রোমোজোম প্রতিলিপনের ফলে দুটি অবিকল সিস্টার ক্রোমাটিড সৃষ্টি হয়। সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় কোহেসিন প্রোটিন দ্বারা সেন্ট্রোমিয়ারে যুক্ত থাকে।
যখন মাইটোসিস শুরু হয়, তখন ক্রোমোজোমগুলো ঘনীভূত এবং দৃশ্যমান হয়। কিছু প্রকৃতকোষী জীব, যেমন প্রাণীদেহের কোষের ডিএনএ কে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথককারী নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ভেঙ্গে ছোট ছোট ভেসিকলে পরিণত হয়। কোষে রাইবোজোম গঠনকারী নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়ে যায়। কোষের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মাইক্রোটিউবিউল বিস্তৃত হয়ে সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয় এবং ক্রোমোজোমগুলোকে কোষের ভেতরে কেন্দ্রের দিকে সারিবদ্ধ করে। মাইক্রোটিউবিউল সংকুচিত হয়ে সিস্টার ক্রোমাটিডকে টেনে প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমকে আলাদা করে ফেলে।
এ পর্যায়ে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোকে বলা হয় অপত্য ক্রোমোজোম। কোষ সম্প্রসারিত হতে থাকলে টান সৃষ্টি হলে অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিপরীতক্রমে কোষের মেরুগুলোতে পৌঁছায় এবং অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষ দিকে সর্বাধিক ঘনীভূত হয়। বিচ্ছিন্ন অপত্য ক্রোমোজোমগুলোর চারদিকে নতুন নিউক্লিয়ার ঝিল্লি সৃষ্টি হয়।
মিয়োসিস (Meiosis):
যে কোষ বিভাজন পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস পরপর দুইবার বিভাজিত হয়ে মাতৃকোষের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম সমন্বিত চারটি অপত্য কোষ উৎপন্ন হয় ,তাকে মিয়োসিস হলে । এটি জীবের জনন কোষে ঘটে। মিয়োসিস বা মায়োসিস এক বিশেষ ধরনের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া যাতে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুবার বিভাজিত হলেও ক্রোমোজোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার, ফলে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বোভেরী সর্বপ্রথম গোল কৃমির জননাঙ্গে এরূপ কোষবিভাজন প্রত্যক্ষ করেন। বিজ্ঞানী স্ট্রাসবার্গার ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সপুষ্পক উদ্ভিদএর জনন মাতৃকোষে এরূপ কোষবিভাজন প্রত্যক্ষ করেন। এরপর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জে. বি. ফারমার (J.B. Farmer) ও জে. ই. এস. মুর (J.E.S. Moore) এ বিশেষ ধরনের কোষবিভাজনের নামকরণ করেন। গ্রীক মূল শব্দের (meioun=to lessen) উপর ভিত্তি করে এর বানান করা হয় Meiosis অর্থাৎ মিয়োসিস।
নিম্নশ্রেণির জীব অর্থাৎ হ্যাপ্লয়েড(n) জীবের গ্যামেটও হ্যাপ্লয়েড। দুটি হ্যাপ্লয়েড গ্যামেটের মিলনে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট-এর জন্ম হয়। কাজেই হ্যাপ্লয়েড জীবের ক্ষেত্রে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষার নিমিত্তে নিষেকের পর জাইগোটে মিয়োসিস হয়।
মাইটোসিস ও মিয়োসিসের মধ্যে পার্থক্যঃ
মাইটোসিসের প্রধান ফলাফল হল একটি মাতৃকোষের জিনোম দুটি অপত্যকোষে স্থানান্তরিত হওয়া। মাইটোসিস ও মিয়োসিসের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। মাইটোসিস হ’ল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুটি অভিন্ন কন্যা কোষ একটি ডাবল (ডিপ্লোডিড) সেটযুক্ত থাকে ক্রোমোজোমের মাদার সেল থেকে গঠিত হয়। অন্যদিকে, বিভাজনেকেবলমাত্র একটি ক্রোমোজোম বিভাগ প্রয়োজনীয় O সামগ্রিকভাবে মাইটোসিসের সম্পূর্ণ জিনগত তথ্য দুটি ডিএনএর আকারে ডিএনএ আকারে বিতরণ করার কাজ রয়েছে এবং তাই কোষের প্রজননের জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
২। মাইটোসিস কোষ বিভাজন জীবের দেহ কোষে ঘটে। অন্যদিকে, মিয়োসিস কোষ বিভাজন জীবের জনন কোষে ঘটে।
৩। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় এক বার। অন্যদিকে, মিয়োসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের একবার এবং নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় পরপর দুইবার।
৪। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে 2 টি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, মিয়োসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
৫। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। অন্যদিকে, মিয়োসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায়।
৬। মাইটোসিস কে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বলা হয়। অন্যদিকে, মিয়োসিস কে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন বলে।