প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণ (Natural Classification):
যে শ্রেণীকরণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে তাদের মাঝে বিদ্যমান মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে তাদের একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণ বলে। যথা- উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে,
কোনো কোনো বীজ এককোষী আবার কোনো কোনো বীজ বহুকোষী। এ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বীজকে যখন এককোষী বা বহুকোষী এই দুই শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয় তখন এ শ্রেণীকরণ হবে বীজের প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণ। প্রাণীজগতের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কিছু প্রাণীর মেরুদন্ড আছে আবার কিছু প্রানীর মেরুদন্ড নেই।
এই মেরুদন্ড থাকা আর না থাকার ভিত্তিতে প্রানীজগতকে যখন মেরুদন্ডী প্রানী এবং অমেরুদন্ডী প্রানী এই দুই শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয় তখন তা হয় প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণ। প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণকে সাধারণ শ্রেণীকরণ বলা হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে শ্রেণীকরণের উদ্দেশ্য থাকে শ্রেণীবদ্ধ বস্তু সমষ্টি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান আহরন করা। একে তাত্ত্বিক শ্রেণীকরণও বলা হয়। কারণ তত্ত্বগত জ্ঞান অর্জন এবং সেই তত্ত্বকে সুসংবদ্ধ করাই হলো এই শ্রেণীকরণের প্রধান কাজ।
কৃত্রিম শ্রেণীকরণ (Artificial Classification):
প্রাকৃতিক শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে যে বিষয় বা বস্তু সমূহকে বিন্যস্ত করা হয় তাদের মাঝে থাকে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য। যে শ্রেণিকরণে বিশেষ কোনো ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে বস্তু বা বিষয়সমূহকে বিন্যস্ত করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। কোনো বিষয় বা বস্তু সমষ্টি সম্পর্কে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে যখন নিজেদের ইচ্ছামতো কতগুলো বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে ঐ বিষয় বা বস্তু সমষ্টিকে একতে সন্নিবেশিত করা হয় তখন তাকে কৃত্রিম বা অবৈজ্ঞানিক শ্রেণীকরণ বলে। এ জাতীয় শ্রেণীকরনকে বিশেষ শ্রেণীকরণ বলা হয়। এর কারণ, এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য হলো শ্রেণীকরণের আসল ভিত্তি।
কৃত্রিম শ্রেণীকরণকে মাঝে মাঝে ব্যবহারিক শ্রেণীকরণও বলা হয়। কারণ ব্যবহারিক সুবিধা সৃষ্টিই হচ্ছে এই শ্রেণীকরণের প্রধান কাজ। এ জাতীয় শ্রেণীকরণকে কৃত্রিম শ্রেণীকরণ বলার কারণ এ কক্ষেত্রে সাদৃশ্যের মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহারিক প্রয়োজনে কতগুলো বাহ্যিক বা কম গুরুত্বপূর্ন সাদৃশ্যকে শ্রেণীকরণের ভিত্তি করা হয়।
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণীকরণের মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রকৃতপক্ষে শ্রেণিকরণ দুই প্রকার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম। আর এখানে উভয় শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত এসেছে। এই দুই শ্রেণিকরণের মধ্যে যেসব পার্থক্য আছে তা নিন্মরূপ-
১। যে শ্রেণিকরণে কোনো বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান লাভের জন্য মৌলিক ও অপরিহার্য সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিন্যস্ত করা হয় তাকে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ বলে। অন্যদিকে যে শ্রেণিকরণে বিশেষ কোনো ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে বস্তু বা বিষয়সমূহকে বিন্যস্ত করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে।
২। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের ভিত্তি হচ্ছে সংজ্ঞা, তাই সংজ্ঞাসংক্রান্ত জ্ঞান শ্রেণিকরণের জন্য প্রয়োজন। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণে সংজ্ঞার জ্ঞান প্রয়োজনীয় নয়। কারণ সেখানে অবান্তর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বস্তুকে বিন্যস্ত করা হয়।
৩। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তাই এর বৈজ্ঞানিক মূল্য অনেক। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ নির্দিষ্ট ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে করা হয় বলে এর গুরুত্ব সীমিত ও সাময়িক।
৪। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বিষয়বস্তু হল প্রাকৃতিক বিষয়, এ বিষয়গুলোর ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণের বিষয়বস্তু মানুষের নিজের তৈরি তাই এগুলোকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন ও সাজানো যায়।
৫। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতির মধ্যেই বর্তমান থাকে। যেমন, মেরুদণ্ডের ভিত্তিতে যখন প্রাণিজগৎকে শ্রেণিকরণ করা হয় তখন সেটি স্বভাবতই ওইসব প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণে সাদৃশ্যের বিষয়গুলো নিজস্ব তৈরিজাত তাই এগুলো প্রয়োজনে পরিবর্তন করে আবার অন্যভাবেও সাজানো যায়। যেমন, গ্রন্থাগারের পুস্তক বিষয়ভিত্তিক সাজানো থাকে। এগুলোকে প্রয়োজনে পরিবর্তন করে অন্যভাবেও সাজানো যায়।
৬। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বস্তুসমূহকে ক্রমানুসারে শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা থাকে। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণে সে ধরনের ক্রমবিন্যাসের বিষয় থাকে না; বরং সেখানে বাহ্যিক সাদৃশ্য ও ব্যক্তিগত সুবিধাই মুখ্য।
৭। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের পেছনে কোনো না কোনো বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য থাকে তাই একে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ বলা হয়। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ হয় না তাই একে অবৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ বলে।