বাজেট শব্দটি Bougette শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই ফরাসী শব্দটির অর্থ হলো ব্যাগ বা থলে। বৃটিশ অর্থমন্ত্রী ১৭৩৩ সালে কমন্স সভায় সর্ব প্রথম বাজেট শব্দটির উল্লেখ করেন। তখন থেকে বাজেট শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারনত কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আয়-ব্যয়ের হিসাবই বাজেট। অর্থাৎ বাজেট হলো একটি নির্দিষ্ট বৎসরে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব যেখানে ঐ সময়ের আর্থিক অবস্থা ও আর্থিক উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করে।
ব্যক্তির বাজেট ও রাষ্ট্রের বাজেটের মধ্যে পার্থক্যঃ
ব্যক্তির বাজেটের সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে ব্যক্তির বাজেট ও রাষ্ট্রের বাজেটের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হয়েছে-
ব্যক্তি তার মৌলিক চাহিদা যেমন-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য তার আয় অনুযায়ী ব্যয় করে থাকে। এক্ষেত্রে সে সাপ্তাহিক বা মাসিক বাজেট তৈরী করে। কারণ ব্যক্তি তার আয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে পেয়ে থাকেন। ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘‘Cut your coat according to your cloth” এই বিষয়টি মাথায় রেখে সাধারণত কোন ব্যক্তি তার বাজেট করে থাকে। অর্থাৎ সে তার অর্জিত আয়ের সাথে ব্যয়ের যে সমন্বয় করবে তা তার বাজেট দ্বারা ঠিক করবে।
মাঝে মাঝে দেখা যায়, বছরে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে বলে উপার্জনকারী অনুমান করেছিলেন ততটুকু ব্যয় হয়নি, কিছুটা বেঁচে গেছে। সেই উদ্বৃত্ত অর্থটুকু থেকে তিনি অন্যান্য প্রয়োজনে খরচ করেন। আবার মাঝে মাঝে দেখা যায়, তিনি যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে বলে অনুমান করছিলেন, তার থেকে বেশি ব্যয় হয়ে গেছে। সে সময় তিনি ব্যয় মেটাতে তার হয়তো এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করতে হয় অথবা ঋণ করেন। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের উৎস হচ্ছে- নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী অথবা ব্যাংক। এ অর্থ পরে আয়ের বিভিন্ন খাত থেকে ক্রমান্বয়ে পরিশোধ করতে হয়।
অন্যদিকে, সরকার ব্যক্তির চেয়ে বৃহৎ ধারণা। কাজেই সরকারি বাজেটেও একটি বৃহৎ ধারণা। তবে ব্যক্তির বাজেটের সাথে সরকারের বাজেটের বেশ কিছু মিল-অমিল আছে। সরকার সাধারণত বাৎসারিক বাজেট প্রণয়ন করে থাকে। আবার ৩ বৎসব বা ৫ বৎসর মেয়াদি বাজেটও থাকতে পারে। তবে ব্যক্তি যেমন তার আয় অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ করে। সরকার তার ঠিক উল্টো কাজটি করে। সরকার আগে ব্যয় নির্ধারণ করে তার পর ব্যয় অনুযায়ী বাজেটে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত গুলোকে গুরুত্ব দেয়। অর্থনীতির বড় বড় বিষয় যেমন-নিয়োগ, বিনিয়োগ, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, সম্পদের কাম্য ব্যবহার, উৎপাদন ইত্যাদি সরকারি বাজেটে স্থান পায়। তাই সরকারি বাজেটকে একটি উচুঁ স্তরের আর্থিক পরিকল্পনা বলা হয়।
রাষ্ট্র সারা বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য শুরুতেই পরিকল্পনা করে কতটুকু আয় হবে এবং কতটুকু ব্যয় হবে। সরকার কোনো একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরের বিভিন্ন উৎস থেকে কী পরিমাণ আয় হবে এবং বিভিন্ন খাতে কী পরিমাণ ব্যয় করতে চায়, তার বিস্তারিত হিসাবকেই সরকারি বাজেট বলে। এক কথায়, একটি দেশের সম্ভাব্য সব আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণই হচ্ছে বাজেট। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকারের ব্যয় ও রাজস্বের পূর্বাভাসও বটে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আর্থিক পরিকল্পনাকেই বাজেট বলে। মূলত: ব্যক্তি বা সরকারের আয়ের সীমাবদ্ধতা থাকার জন্যই বাজেট করতে হয়। ব্যক্তি তার আয় অনুযায়ী ব্যয় করে।
অন্যদিকে, সরকার এরূপ আচরন নাও করতে পারে। সরকার তার ব্যয় অনুযায়ী আয় সংগ্রহ করতে পারে। তবে ব্যক্তি ও সরকার উভয়েরই আয়-ব্যয়ের প্রতিচ্ছবি হলো বাজেট।