নিউরনঃ
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একক কে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল। আর এগুলো একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত রয়েছে তেমনি শত শত কোটি স্নায়ুতন্তু দিয়ে। প্রতিটি নিউরনে দুটি অংশ থাকে। যথা :
১. কোষদেহ
২. প্রবর্ধক অংশ
এটাকে স্নায়ু কোষের দেহ বা Soma বলা হয়। কোষদেহে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষপর্দা, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্ন অঙ্গানু রয়েছে। এটা নিউরোনের মুখ্য অংশ এবং এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, মোচাকার, সুঁচালো, তারকাকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোষদেহের ব্যাস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। কোষে সেন্ট্রিওল থাকে, তবে তা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। তাই নিউরোনের কোষ বিভাজনও হয় না, যেহেতু সেন্ট্রোজোম কোষ বিভাজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
নেফ্রনঃ
নেফ্রন (ইংরেজি: Nephron; গ্রিক ভাষায়: νεφρός – এর অর্থ বৃক্ক) বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যগত একক। এরা মূত্র তৈরী করে এবং প্রতিটি বৃক্কে এদের সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়নের মত। কর্টেক্সে নেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান করপাসলের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নেফ্রনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়,- সুপারফিসিয়াল নেফ্রন (৮৫%) -এই প্রকার নেফ্রন ছোট আকৃতির হয় এবং বৃক্কের সুপারফিসিয়াল কর্টেক্সে থাকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় এই প্রকারের নেফ্রনই মূত্র উৎপাদন করে। মিড করটিক্যাল নেফ্রন (৫%)। জাক্সট্রামেডুলারি নেফ্রন (১০%) এই প্রকার নেফ্রন তুলনামূলকভাবে বড় আকৃতির হয় এবং বৃক্কের জাক্সট্রামেডুলারি কর্টেক্সে অর্থাৎ মেডুলার ঠিক উপরে কর্টক্সে থাকে। জরুরী অবস্থায় বা পীড়ন অবস্থায় এই প্রকারের নেফ্রন মূত্র উৎপাদন করে।
নেফ্রন কিডনির কার্যকরী একক ২ এর অর্থ হ’ল প্রতিটি পৃথক নেফ্রনই যেখানে কিডনির মূল কাজ সম্পাদিত হয়। একটি নেফ্রন দুটি অংশ দিয়ে তৈরি: একটি রেনাল কর্পাস্কেল, যা প্রাথমিক ফিল্টারিং উপাদান এবং একটি রেনাল নল যা ফিল্টার করা তরলটি প্রক্রিয়া করে এবং বহন করে।
নিউরন ও নেফ্রনের পার্থক্য:
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একক কে নিউরন বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ দিয়ে তৈরি। নিউরন ও নেফ্রন এর পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১। নিউরন স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যকরী একক। অন্যদিকে নেফ্রন রেচনতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যকরী একক।
২। নিউরন মূলত একটি বিশেষ রূপান্তরিত কোষ। অন্যদিকে নেফ্রন একাধিক কোষের সমন্বয়ে গঠিত একক।
৩। নিউরন উদ্দীপনা বহন করে। অন্যদিকে নেফ্রন রক্ত পরিশোধন করে এবং মুত্র তৈরি করে।
৪। একটি নিউরন অন্যান্য নিউরনের সাথে সিন্যাপ্স সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে। অন্যদিকে একটি নেফ্রনের সাথে অন্যান্য নেফ্রনের যোগাযোগ সম্ভব নয়।
৫। নিউরন ডেনড্রন, অ্যাক্সন ও কোষদেহের সমন্বয়ে গঠিত। অন্যদিকে নেফ্রন রেনাল করপাসল ও রেনাল টিউব্যুলের সমন্বয়ে গঠিত।
৬। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে। অন্যদিকে মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ নেফ্রন থাকে।
৭। নিউরন দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনের সাথে সম্পর্কিত নয়। অন্যদিকে নেফ্রন দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনের সাথে সম্পর্কিত।
৮। নিউরন স্নায়ুতাড়না ও উদ্দীপনার সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে নেফ্রন স্নায়ুতাড়না ও উদ্দীপনার সাথে সম্পর্কিত নয়।
৯। নিউরন প্রধানত তিন প্রকার, যথা- সংবেদী স্নায়ু, মোটর স্নায়ু ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু। অন্যদিকে নেফ্রন প্রধানত দুই প্রকার, যথা- কর্টিকাল নেফ্রন ও জাক্সট্রামেডুলারি নেফ্রন।
১০। নিউরনের অ্যাক্সনে মায়েলিন স্তর থাকে, যা তড়িৎসংকেত প্রেরণে সাহায্য করে। অন্যদিকে নেফ্রনে মায়েলিন স্তর থাকে না ।