নিউরন (neurone):
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল। আর এগুলো একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত রয়েছে তেমনি শত শত কোটি স্নায়ুতন্তু দিয়ে। নিউরন মানবদেহের দীর্ঘতম কোষ। নিউরনের ২ টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।যথা- কোষদেহ ও প্রলম্বিত অংশ।
এটাকে স্নায়ু কোষের দেহ বা Soma বলা হয়। কোষদেহে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষপর্দা, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্ন অঙ্গানু রয়েছে। এটা নিউরোনের মুখ্য অংশ এবং এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, মোচাকার, সুঁচালো, তারকাকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোষদেহের ব্যাস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। কোষে সেন্ট্রিওল থাকে, তবে তা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে।
তাই নিউরোনের কোষ বিভাজনও হয় না, যেহেতু সেন্ট্রোজোম কোষ বিভাজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।কোষদেহ থেকে নির্গত বা বহির্গত শাখা-প্রশাখাকে প্রবর্ধক অংশ বলে। এটি দু’ধরনের যথা- ১. ডেনড্রাইট (Dendrite) ও ২.অ্যাক্সন (Axon)।
নিউরোগ্লিয়া (neuroglia):
যে বিশেষ প্রকার কলা নিউরোনের ধারক , অন্তরক ও সুরক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে এবং নিউরোনের মৃত্যুর পর সেই স্থান দখল করে , তাকে নিউরোগ্লিয়া বলে। স্নায়ুকোষ বা নিউরোন ছাড়াও স্নায়ুকলায় বা স্নায়ুতন্ত্রে নিউরোগ্লিয়া নামে আর একরকম গঠন গত উপাদান পরিলক্ষিত হয় ।এটি প্রকৃতপক্ষে একরকমের পরিবর্তিত যোগ কলা । এরা স্নায়ুতন্ত্রের ধারক কোষ হিসাবে কাজ করে ।
এরা বিভাজনে সক্ষম এবং বহু প্রবর্ধকযুক্ত । এদের স্নায়ুস্পন্দন পরিবহনের ক্ষমতা নেই । স্নায়ুকোষের মৃত্যুর পর এগুলি তার স্থান দখল করে । স্নায়ুতন্ত্রের মোট কোষসমষ্টির প্রায় 90 শতাংশই হল নিউরোগ্লিয়া ।
নিউরন এবং নিউরোগ্লিয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। নিউরন এবং নিউরোগ্লিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপ-
১। একটি নিউরনকে স্নায়ু কোষ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা বৈদ্যুতিকভাবে উত্তেজিত হয় এবং মস্তিষ্ক থেকে তড়িৎ এবং রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংক্রমণে সহায়তা করে এবং এর বিপরীতে। অন্যদিকে নিউরোগ্লিয়া মানব দেহের টিস্যু হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা স্নায়ুতন্ত্রের সাথে তাদের সংযোগের জন্য পরিচিত এবং অনেক ধরণের কোষ রয়েছে যা নিউরনের সাথে সম্পর্কিত।
২। নিউরনের প্রধান ধরণের সংবেদনশীল নিউরনস, মোটর নিউরনস, ইন্টারনিউরনস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে নিউরোগ্লিয়ায় প্রধান ধরণের নিউরোগ্লিয়া রয়েছে অ্যাস্ট্রোকাইট, অলিগোডেনড্রোসাইটস, এপেন্ডাইমাল এবং রেডিয়াল গ্লিয়া।
৩। নিউরোগ্লিয়ার প্রাথমিক কাজটি হ’ল নিউরনের বিপাক এবং সিগন্যালিং ফাংশনকে সমর্থন করা। অন্যদিকে নিউরনের মূল ফাংশন সারা শরীর জুড়ে তথ্য ছড়িয়ে থাকে এবং বিভিন্ন রূপে সংঘটিত সমস্ত যোগাযোগের জন্য দায়ী।
৪। নিউরোনগুলি স্নায়ুতন্ত্রের কাঠামোগত এবং কার্যকরী একক হিসাবে অভিহিত করা যেতে পারে। অন্যদিকে নিউরোগ্লিয়া সহায়ক কোষ।
৫। নিউরোগ্লিয়া হ’ল যা মেলিন মাপ গঠন করে। অন্যদিকে এগুলি নিউরনের অ্যাক্সনে কার্যকরী হিসাবে উপস্থিত থাকে।
৬। নিউরোগ্লিয়া হ’ল যা বয়সের সাথে কম হয়। অন্যদিকে বেশিরভাগ নিউরন মূল পরিমাণে রাখে, তবে নতুন তৈরি হয় না।
৭। নিউরোনগুলি শরীরের অঙ্গগুলি কাজ করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে নিউরোগ্লিয়া তাদের শরীরের অঙ্গগুলি স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখে।