নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের মধ্যে পার্থক্য

নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষ দুটি ধরনের জ্ঞানলাভের পদ্ধতি যা ন্যায় দর্শনে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এই দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হল জ্ঞানের বিষয়বস্তু এবং তার প্রকাশের ধরন। নিচে নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল সেই জ্ঞান যেখানে কোনো বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে সরাসরি উপলব্ধি হয়, কিন্তু তার গুণ, ধর্ম বা বিশেষণ সম্পর্কে কোনো বিচার করা হয় না। অন্যদিকে, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হল সেই জ্ঞান যেখানে কোনো বস্তুর অস্তিত্বের সাথে সাথে তার গুণ, ধর্ম বা বিশেষণ সম্পর্কেও জানা যায়।

২. নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রত্যক্ষে প্রথম স্তর। আর সবিকল্পক প্রত্যক্ষ দ্বিতীয় স্তর।

৩. নির্বিকল্পক জ্ঞান হল অব্যপদেশ্য জ্ঞান। এই রূপ জ্ঞানকে কোনো বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানকে বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই সবিকল্পক জ্ঞান হল ব্যপদেশ্য জ্ঞান।

৪। নির্বিকল্পক জ্ঞান হল অব্যবসায়াত্মক জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান বা অস্পষ্ট জ্ঞান। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞান ব্যবসায়াত্মক বা সুস্পষ্ট জ্ঞান বা সুনিশ্চিত জ্ঞান।

৫। নির্বিকল্পক জ্ঞানের অনুব্যবসায় সম্ভব নয়। কিন্তু সবিকল্পক জ্ঞানের অনুব্যবসায় সম্ভব। ‘অনু ব্যবসায়’ শব্দটির অর্থ স্মৃতি বা পূর্ব জ্ঞান। এখন নির্বিকল্পক জ্ঞান পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয় বলে এই প্রত্যক্ষ স্মৃতি ও কল্পনা বর্জিত। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞান পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তাই এই প্রত্যক্ষে স্মৃতি ও কল্পনার ভূমিকা আছে।

৬। নির্বিকল্পক জ্ঞান নিস্প্রকারক বলে বচনে প্রকাশ করা যায় না। তাই এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে না। অর্থাৎ, নির্বিকল্প জ্ঞান প্রমা বা অপ্রমা হতে পারেনা। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানকে বচনাকারে প্রকাশ করা যায় বলে, এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে। অর্থাৎ, সবিকল্পক 1 জ্ঞান প্রমা ও অপ্রমা উভয়ই হতে পারে।

৭. নির্বিকল্পক জ্ঞান কোনো বস্তুর নাম, জাতি, গুণ বা বিশেষণের সাথে সম্পর্কিত নয়। অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র একটি বস্তুর অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানে কোনো বস্তুর নাম, জাতি, গুণ বা বিশেষণ সম্পর্কিত তথ্য থাকে। অর্থাৎ, এটি শুধু বস্তুর অস্তিত্বই নির্দেশ করে না, বরং তার বৈশিষ্ট্যগুলোও বর্ণনা করে।

৮. নির্বিকল্পক জ্ঞান শুধুমাত্র কোনো বস্তুর অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। বস্তুটি কী, কেমন বা কী দিয়ে তৈরি তা এখানে জানা যায় না। অন্যদিকে, সবিকল্পক জ্ঞান বস্তুর অস্তিত্বের সাথে সাথে তার গুণাবলীও নির্দেশ করে। অর্থাৎ, এটি বস্তুটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়।

৯. নির্বিকল্পক শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। অনুমান, উপমা বা অন্য কোনো মানসিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অনুমান, উপমা, শাব্দবোধ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে হতে পারে।

১০. নির্বিকল্পক এখানে শুধু সংযোগ সন্নিকর্ষই প্রয়োজন। অর্থাৎ, একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার জন্য। অন্যদিকে, সবিকল্পক এখানে সংযোগ সন্নিকর্ষের পাশাপাশি অন্যান্য লৌকিক সন্নিকর্ষ যেমন সমভাব, কারণ-কার্য সম্পর্ক ইত্যাদিও প্রযোজ্য হতে পারে।

১১. উদাহরণ: আমি একটি গাছ দেখলাম। এটি একটি নির্বিকল্পক জ্ঞান। কিন্তু আমি বললাম, “আমি একটি সবুজ গাছ দেখলাম।” এটি একটি সবিকল্পক জ্ঞান।