সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ দুটিই সমুদ্রের গতিশীলতার সাথে জড়িত, তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. প্রবল বায়ুপ্রবাহ বা ভূকম্পনের প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি যখন একই স্থানে উলম্বভাবে ওঠা-নামা করে, তখন তাকে সমুদ্রতরঙ্গ বলে। অন্যদিকে, বায়ুর অভিঘাত সহ একাধিক নিয়ন্ত্রকের প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি যখন অনুভূমিকভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়মিত প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রস্রোত বলে।
২. সমুদ্র জলপৃষ্ঠের সঙ্গে বাতাসের ঘর্ষণের ফলে ও ভূকম্পনজনিত কারণে সমুদ্রতরঙ্গের উৎপত্তি ঘটে। অন্যদিকে, পৃথিবীর আবর্তন গতি, নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও লবনতার পার্থক্য প্রভৃতি কারণে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
৩. সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, সমুদ্রস্রোত উপকূল থেকে দূরে উপকূলের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়।
৪. সমুদ্রতরঙ্গে জলরাশি একই স্থানে অবস্থানের মাধ্যমে উল্লম্বভাবে বৃত্তাকার কক্ষপথে ওঠা-নামা করে। অন্যদিকে, সমুদ্রস্রোতে জলরাশি একটি সুনির্দিষ্ট পথে অনুভূমিকভাবে নিয়মিত প্রবাহিত হয়।
৫. কার্যের প্রকৃতি অনুসারে সমুদ্রতরঙ্গ দুই প্রকার যথা- গঠনকারী তরঙ্গ ও বিনাশকারী তরঙ্গ। অন্যদিকে, উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে সমুদ্রস্রোত দু’প্রকারের হয়। যথা- উষ্ণ সমুদ্রস্রোত ও শীতল সমুদ্রস্রোত।
৬. সমুদ্রতরঙ্গ ক্ষয় ও সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে উপকূলের ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়। অন্যদিকে, সমুদ্রস্রোতের দ্বারা উপকূলের ভূমিরূপের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
৭. সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের জলবায়ুতে বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে, সমুদ্রস্রোত উপকূলের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে শীতপ্রধান অঞ্চলে উপকূলভাগের উষ্ণতা বাড়ে এবং শীতল স্রোতের প্রভাবে উষ্ণ উপকূলভাগ শীতল হয়।
৮. সমুদ্রস্রোত যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের ভূমিরূপকে নিয়ন্ত্রণ করে।