সাধারন উদ্ভিদ (Ordinary plant):
উদ্ভিদ জীবজগতের একটি বড় গোষ্ঠী যাদের অধিকাংশই সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে শর্করা-জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে এবং এরা চলাচল করতে পারে না। বৃক্ষ, গুল্ম, বিরুৎ ইত্যাদি উদ্ভিদ জগতের অন্তর্গত। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৭,৬৫৫টি প্রজাতিকে শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে ২৫৮,৬৫০ হলো সপুষ্পক উদ্ভিদ।
বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়: কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কাণ্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়। কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত। আবার কিছু লেখক গাছের কাণ্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি।
লবণাম্বু উদ্ভিদ (Halophytes):
লবণাম্বু উদ্ভিদ ও সাধারণ উদ্ভিদের জীবনধারণের পক্ষে অনুপযুক্ত, খুব বেশি পরিমাণে খনিজ লোনা মাটিতে অথবা লােনা জলে যেসব উদ্ভিদ স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করে, সেইসব উদ্ভিদকে বলা হয় লবণাম্বু উদ্ভিদ (Halophytes )। প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণ যথা- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যুক্ত লবণাক্ত মাটিতে এই উদ্ভিদগুলি বিস্তারলাভে সক্ষম। লবণাম্বু হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা বা লবণাক্ত জল বা পানিতে জন্মায়। ম্যানগ্রোভ (Mangrove) জাতীয় উদ্ভিদই হলো লবণাম্বু উদ্ভিদ। যেমন- সুন্দরী (Heritiera fomes), গরান, গেঁওয়া (Excoecaria agallocha), কেওড়া (Sonneratia apetala) ইত্যাদি।
সাধারন উদ্ভিদ ও লবণাম্বু উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্যঃ
খনিজ লোনা মাটিতে অথবা লােনা জলে যেসব উদ্ভিদ স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করে, সেইসব উদ্ভিদকে বলা হয় লবণাম্বু উদ্ভিদ। সাধারন উদ্ভিদ ও লবণাম্বু উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. সাধারন উদ্ভিদ জলময় বা শুষ্ক পরিবেশ ব্যতীত স্বাভাবিক পরিবেশে জন্মায় । অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদ নদী মোহানার সক্রিয় বদ্বীপ এবং উপকূলবর্তী নিম্নভূমি অঞ্চলের লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় ।
২. সাধারন উদ্ভিদের মূলগুলি সুগঠিত হয় । প্রধান মূল খুবই দীর্ঘ ও মোটা এবং এর পাশে বহু অপ্রধান মুল থাকে । অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদের মূলগুলি মাটির গভীরে প্রবেশ করে না । প্রধান মূলের পাশে বহু ঠেসমূল এবং এগুলি থেকে আবার অনেক শ্বাসমূল বের হয় ।
৩. সাধারন উদ্ভিদ মোটা ও সুদীর্ঘ হয় এবং শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয় । অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদেরকাণ্ড রসালো , নরম বা কাষ্ঠল প্রকৃতির হয় ।
৪. সাধারন উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্ন আকৃতির , সুগঠিত , চওড়া ও পাতলা হয় এবং মোমের মতো কোনো পদার্থ দ্বারা ঢাকা থাকে না । অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্ন আকারের এবং খুবই পুরু হয় । পাতা মোমের মতো পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে ।
৫. সাধারন উদ্ভিদ চিরসবুজ , পাতাঝরা বা মিশ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে ৷ অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদ প্রধানত চিরসবুজ প্রকৃতির হয়ে থাকে ।
৬. সাধারন উদ্ভিদ খুবই দীর্ঘ এবং অসংখ্য শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয় । অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদ মাঝারি উচ্চতার এবং অল্প শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয় ।
৭. সাধারন উদ্ভিদের ফল ও বীজগুলি বিভিন্ন আকৃতি ও বিভিন্ন ওজনের হয় । লবণাম্বু উদ্ভিদের বীজগুলি মাটিতে পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে অঙ্কুরোদ্গম হয় । অন্যদিকে, ফল ও বীজ বড় এবং ওজনে হালকা হয় । বীজগুলি মাটিতে পড়বার আগেই জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম হয় ।