জৈব যৌগ:
জৈব যৌগ হল এক ধরনের যৌগিক পদার্থ যার কমন উপাদান হিসেবে কার্বন থাকে। ঐতিহাসিক কারণে কিছু যৌগ যেমন- কার্বনেট, কার্বনের সাধারণ অক্সাইড, সায়ানাইড এবং কার্বনের রূপভেদকে অজৈব যৌগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮২৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, জৈব যৌগ শুধু প্রাণশক্তির প্রভাবে জীব ও প্রাণীদেহে সৃষ্টি হয়, একে পরীক্ষাগারে সংশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। ফ্রেডরিখ ভোলার ১৮২৮ সালে অজৈব অ্যামোনিয়াম সায়ানেট থেকে পরীক্ষাগারে ইউরিয়া সংশ্লেষণ করেন, যা একটি জৈব যৌগ। এর ফলে শতাব্দীকাল ধরে প্রচলিত ধারণার অবসান ঘটে। জীব ও প্রাণিদেহ মূলত জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত।
অজৈব যৌগ:
অজৈব যৌগ সাধারণত একটি রাসায়নিক যৌগ যাতে কার্বন – হাইড্রোজেন বন্ধন থাকে না অর্থাৎ এটি একটি যৌগ যা কোনও জৈব যৌগ নয়। তবে, এই পার্থক্য যেমন সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি তেমনি একমতও হওয়া যায়নি। অনেক কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। অজৈব যৌগের অধ্যয়ন অজৈব রসায়ন হিসাবে পরিচিত। পৃথিবীর ভূত্বকের বেশিরভাগটাই অজৈব যৌগ নিয়ে গঠিত। যদিও পৃথিবীর ভূগর্ভের অভ্যন্তরের উপাদান নিয়ে নানান অনুসন্ধান চলছে। কার্বনযুক্ত কিছু সাধারণ যৌগকে প্রায়শই অজৈব যৌগ হিসাবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বনেটস্, কার্বাইডস্, সায়ানাইডসস, সায়ানেটস্ এবং থায়োকায়ানেটস্-এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এর মধ্যে বেশিরভাগই জৈব শ্রেণীর বা জীব সম্বন্ধযুক্ত।
জৈব ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। সমস্ত জৈব যৌগের অণুতে কার্বন থাকবেই । যেমন: CH4, C2H3OH ইত্যাদি ।পক্ষান্তরে অজৈব যৌগের অণুতে কার্বন থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে । অজৈব যৌগ সব রকম মৌল দিয়ে গঠিত হতে পারে । যেমন: NH3, CO2 ইত্যাদি ।
২। জৈব যৌগগুলি সমযোজ্যতা দ্বারা গঠিত । সুতরাং, জৈব যৌগগুলি সমযোজী : যেমন: মিথেন, ইথেন, প্রপেন, অ্যাসিটিলিন ইথিলিন, বেনজিন, মিথাইল অ্যালকোহল, ভিনিগার প্রভৃতি । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎযোজী বন্ধনের দ্বারা আবদ্ধ : যেমন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালশিয়াম অক্সাইড, ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি । অজৈব যৌগগুলি তড়িৎযোজী হতে পারে আবার সমযোজীও হতে পারে ।
৩। জৈব যৌগগুলি সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় । এরা সাধারণত জলে অদ্রাব্য । অর্থাৎ, জৈব যৌগগুলি সাধারণত অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য এবং ধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য । (কিছু জৈব যৌগ অবশ্য জলে দ্রাব্য) । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগগুলি সাধারণত জল এবং সমধর্মী দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় এবং এরা জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য । অর্থাৎ, অজৈব যৌগগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য এবং অধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য ।
৪। সাধারণত জৈব যৌগের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক অজৈব যৌগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম, তাদের উদ্বায়ীতাও বেশি । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক জৈব যৌগের তুলনায় অনেক বেশি । এগুলি সাধারণত অনুদ্বায়ী ।
৫। জৈব যৌগগুলি দাহ্য প্রকৃতির হয় । সাধারণত কম সংখ্যক কার্বন পরমাণুযুক্ত যৌগগুলি অদীপ্ত শিখায় জ্বলে । আবার বেনজিন প্রভৃতি বেশি কার্বনযুক্ত যৌগগুলি ধোঁয়াটে শিখায় জ্বলে । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগগুলি সাধারণত দাহ্য নয় ।
৬। জৈব যৌগগুলি অনেকক্ষেত্রে পলিমারাইজেশন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে । আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত বস্তুর বেশির ভাগই জৈব পলিমার । যেমন— চাল, ময়দা, আলু, কাগজ জামা-কাপড়, প্লাস্টিক, ইত্যাদি । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে পলিমারাইজেশন বিক্রিয়া খুবই কম ।
৭। কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন ধর্মের জন্য জৈব যৌগের কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে অতিদীর্ঘ কার্বন শৃঙ্খল গঠনের মাধ্যমে বেশি আণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট যৌগ উত্পন্ন করতে পারে । পক্ষান্তরে অজৈব যৌগের অণুর গঠন অপেক্ষাকৃত সরল এবং আণবিক গুরুত্ব জৈব যৌগের তুলনায় কম ।