Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

পালি ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে পার্থক্য

পালি ও সংস্কৃত ভাষার

পালি ভাষা (Pali) :
থেরবাদী বৌদ্ধদের মূল ধর্মগ্রন্থত্রিপিটক যে ভাষায় রচিত তা পালি ভাষা নামে অভিহিত। এ ভাষার চর্চা ও গবেষণাসূদূরপ্রসারী। পালি শব্দের অর্থ পঙক্তি পালন করা,রক্ষা করা,তন্ত্র,বীথি বা শ্রেনীপ্রভৃতি বলে পন্ডিগণ মতামত প্রকাশ করেছেন।

সুতরাং সেই অনুযায়ী বলা যায়, যে ভাষায় বৌদ্ধ ত্রিপিটক বা বুদ্ধ বানী সমূহ পালন, রক্ষা ও সংরক্ষন করা হয়েছে সেই ভাষাটিই পালি ভাষা।পালি মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি ভাগের মধ্যে প্রথম ভাগ।এ ভাষাটি শ্রীলঙ্কা,বার্মা,কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এখনও একটিজীবন্ত ভাষা।

সংস্কৃত ভাষা (Sanskrit Language):
সংস্কৃত ভাষার সঠিক নাম: संस्कृता वाक्, সংস্কৃতা বাক্, পরবর্তীকালে প্রচলিত অপর নাম: संस्कृतभाषा সংস্কৃতভাষা, “পরিমার্জিত ভাষা”) হল একটি ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষা। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান দুই বিভাগের একটি “শতম” ভুক্ত ভাষা। বর্তমানে সংস্কৃত ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার অন্যতম এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অন্যতম সরকারি ভাষা।

ধ্রুপদী-সংস্কৃত এই ভাষার প্রামাণ্য ভাষা প্রকার। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত পাণিনির ব্যাকরণে এই প্রামাণ্যরূপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপে লাতিন বা প্রাচীন গ্রিক ভাষার যে স্থান, বৃহত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে সংস্কৃত ভাষার সেই স্থান। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,“ বহুধাবিভক্ত ভারত ছোটো ছোটো রাজ্যে কেবলই কাড়াকাড়ি হানাহানি করেছে, সাধারণ শত্রু যখন দ্বারে এসেছে সকলে এক হয়ে বিদেশীর আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি। এই শোচনীয় আত্মবিচ্ছেদ ও বহির্বিপ্লবের সময়ে ভারতবর্ষে একটিমাত্র ঐক্যের মহাকর্ষশক্তি ছিল, সে তার সংস্কৃত ভাষা।

পালি ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সংস্কৃতকে ভারতীয় ভাষার জননী বলা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি এবং বৈদিক সাহিত্যের ভাষা। অন্যদিকে, পালি ভাষা সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত একটি প্রাকৃত ভাষা। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের জন্য এই ভাষাটি ব্যবহৃত হতো। বুদ্ধদেব তাঁর উপদেশাবলী মাগধী প্রাকৃতের মাধ্যমেই প্রচার করেছিলেন বলে শোনা যায়।

২. সংস্কৃত ভাষা বৈদিক সাহিত্য, উপনিষদ, পুরাণ, মহাকাব্য, দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এটি হিন্দু ধর্মের পবিত্র ভাষা হিসাবে বিবেচিত। অন্যদিকে, পালি ভাষা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ এবং ত্রিপিটক রচনার জন্য ব্যবহৃত হতো।

৩. সংস্কৃত সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বৈদিক সাহিত্য, উপনিষদ, পুরাণ, মহাকাব্য, নাটক, কাব্য ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যকর্ম সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছে। অন্যদিকে, পালি সাহিত্য প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ এবং ত্রিপিটকের উপর নির্ভরশীল।

৪. সংস্কৃতের তুলনায় পালি ভাষায় ধ্বনি ব্যবস্থা কিছুটা সরল।

৫. সংস্কৃতের ব্যাকরণের তুলনায় পালি ব্যাকরণ কিছুটা সহজ।

৬. সংস্কৃত ভাষার প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য ভাষাগুলিতে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, পালি ভাষার প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক ভাষায় দেখা যায়, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচলিত।

Exit mobile version