প্যারোল (Parole):
যখন একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কে নির্দিষ্ট কারণে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের নজরদারিতে সাময়িক সময় এর জন্য মুক্তি প্রদান করা হয়। ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই বোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।
ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোন আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন। বন্দীকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে।
মুক্তির সময়সীমা কোন অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। কোন বন্দী জেলার কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারীকর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দুরুত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর এর ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।
জামিন (Bail):
ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের কোনো সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। সাধারণত সংশ্লিষ্ট আদালতে সময়মতো হাজির করার শর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের নিকট সমর্পণ করাকে জামিন বলে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তিনি গ্রেফতার এড়াতে আদালত থেকে যে জামিন নিয়ে থাকেন সাধারণত তাকে আগাম জামিন বলে। আর কারাগারে আটক অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত যে জামিন নেওয়া হয় তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বলে।
মামলায় জড়ানোর পর জামিন পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তবে এর আগে আসাসিকে প্রমাণ করতে হবে তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বা হবে। তাই জামিন নেওয়া তাঁর একান্ত প্রয়োজন।
প্যারোল ও জামিনের মধ্যে পার্থক্যঃ
প্যারোল ও জামিন উভয়ই আইন ও আদালতের সাথে জড়িত থাকলেও এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নিচে প্যারোল ও জামিনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে-
১. জামিন হলো কেউ যদি মামলার আসামী হয়ে থাকেন বা আসামী হয়ে আটক হয়ে থাকেন তখন তিনি আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে, প্যারোল তখনই দেওয়া হয় যখন আসামী ইতোমধ্যেই আটক হয়ে কারাগারে আছেন কিন্তু বাইরে এমন কিছু ঘটলো যাতে তিনি বিধি মোতাবেক প্যারোল আবেদনের যোগ্য হন তাহলে তিনি আবেদন করতে পারেন।
২. জামিন হয় আদালতের নির্দেশে। অন্যদিকে, প্যারোল হয় প্রশাসনিক আদেশে।
৩. জামিন পাওয়া ব্যক্তি বাইরে স্বাধীন থাকবেন। তিনি কোনো আদালত বা পুলিশের জিম্মায় থাকবেন না। অন্যদিকে, প্যারোল পাওয়া ব্যক্তি পুরো সময় পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকেন।
৪. জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তি নির্ধারিত দিনে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হাজিরা দেন। অন্যদিকে, প্যারোল পাওয়া ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময় পর পুলিশ কারাগারে নিয়ে আসবে।