পেডালফার মাটি ((Pedalfer Soil):
বৃষ্টিপাত ও বাষ্পীভবনের অনুপাতের উপর নির্ভর করে যেখানে ধৌত প্রক্রিয়ায় মুক্ত ক্যালসিয়াম অপসারিত হয়ে কেবলমাত্র অ্যালুমিনিয়াম ও লৌহ অক্সাইড পড়ে থাকে, সেই মৃত্তিকাকে পেডালফার মৃত্তিকা (Pedalfer Soil) বলে । অর্থাৎ যে মাটিতে অ্যাল অর্থাৎ অ্যালুমিনিয়াম, ফার অর্থাৎ ফেরাস বা লোহা বেশি থাকে। সেই মাটিকে পেডালফার মৃত্তিকা বলে। পেডালফার মাটির আক্ষরিক অর্থ- Pedalfer = Ped + Al + Fer অর্থাৎ, মাটি+ অ্যালুমিনিয়াম + লৌহ অক্সাইড।
সাধারণত বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে মাটির মধ্যস্থিত লবন অপসারিত হয়ে মাটির নিম্ন স্তরে চলে যায় এবং অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা মিশে পেডালফার মাটি গঠিত হয়। এই মাটি আম্লিক প্রকৃতির হয়। উদাহরণ – পডসল, তুন্দ্রা ও রোহিত মাটি ইত্যাদি।
পেডোক্যাল মাটি ((Pedocal Soil):
পেড শব্দের অর্থ হল মাটি এবং ক্যাল শব্দের অর্থ হল ক্যালসিয়াম। বাষ্পীভবন অপেক্ষা বৃষ্টিপাত কম হলে (শুষ্ক জলবায়ুতে) কৈশিক প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার নীচ থেকে ওপরের দিকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও লবণ উঠে আসে মাটির উপরিস্তরে সঞ্চিত হয় । এই প্রকার মাটি পেডোক্যাল মৃত্তিকা (Pedocal Soil) নামে পরিচিত । অর্থাৎ চুনজাতীয় মাটিকে পেডোক্যাল মাটি বলে। পেডোক্যাল মাটির আক্ষরিক অর্থ- Pedocal = Ped + Cal অর্থাৎ, মৃত্তিকা + ক্যালসিয়াম কার্বনেট।
কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে এই ধরণের মাটি সৃষ্ট হয়। কারণ বৃষ্টিপাতের অভাবে এই মাটিতে চুন ও লবন অপসারিত হতে পারে না ফলে মাটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়। এই মাটিতে হিউমাসের পরিমান কম থাকে। এই মাটি ধূসর কালচে রঙের হয়। উদাহরণ – সেরোজেম, চেস্টনাট, চারনোজেম ইত্যাদি।
পেডালফার ও পেডোক্যাল মাটির মধ্যে পার্থক্যঃ
সাধারণত বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে মাটির মধ্যস্থিত লবন অপসারিত হয়ে মাটির নিম্ন স্তরে চলে যায়। পেডালফার ও পেডোক্যাল মাটির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১। বৃষ্টিপাত ও বাষ্পীভবনের অনুপাতের উপর নির্ভর করে যেখানে ধৌত প্রক্রিয়ায় মুক্ত ক্যালসিয়াম অপসারিত হয়ে কেবলমাত্র অ্যালুমিনিয়াম ও লৌহ অক্সাইড পড়ে থাকে, সেই মৃত্তিকাকে পেডালফার মাটি (Pedalfer Soil) বলে। অন্যদিকে, বাষ্পীভবন অপেক্ষা বৃষ্টিপাত কম হলে (শুষ্ক জলবায়ুতে) কৈশিক প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার নীচ থেকে ওপরের দিকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও লবণ উঠে আসে মাটির উপরিস্তরে সঞ্চিত হয় । এই প্রকার মাটি পেডোক্যাল মাটি (Pedocal Soil) বলে।
২। বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্ছলে ভৌত প্রক্রিয়ায় ক্যালশিয়াম অপসারিত হয়ে কেবল অ্যালুমনিয়াম ও লৌহ অক্সাইড পড়ে থাকে, সেখানে পেডালফার মাটি গঠিত হয়। অন্যদিকে, কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্ছলে বাষ্পিভবনের পরিমান বেশি হলে ক্যিলশিয়াম, কার্বন ও লবনের কৌশিক প্রক্রিয়ায় মাটির নীচের স্তর থেকে মাটি, উপরের স্তরে উঠে এসে এই পেডোক্যাল মাটি গঠিত হয় ।
৩। পেডালফার মাটির প্রধানত আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটি প্রধানত শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে পরিলক্ষিত হয়।
৪। পেডালফার মাটির প্রধান উপাদান হল লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটির প্রধান উপাদান হল ক্যালসিয়াম কার্বনেট।
৫। রাসায়নিক ধর্মের দিক থেকে পেডালফার মাটির অম্লধর্মী হয়। অন্যদিকে, ধর্মের দিক থেকে পেডোক্যাল মাটি ক্ষারধর্মী হয়।
৬। লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে বলেই পেডালফার মাটি লাল বর্ণের হয়। অন্যদিকে, চুন লবণ ও জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় পেডোক্যাল মাটি কালচে ও ধূসর বর্ণের হয়।
৭। পেডালফার মাটিতে PH এর মাত্রা ৭ এর কম হয়। তাই এই মৃত্তিকায় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি হয়। অন্যদিকে,পেডোক্যাল মাটিতে PH এর মাত্রা ৭ এর বেশী হয়। তাই এই মৃত্তিকায় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ কম হয়।
৮। পেডালফার মাটির ‘B’ স্তরে কঠিন পাত্র বা হার্ডপ্যান গঠিত হয়। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটি স্তরায়নে কোন কঠিন পাত্র গঠিত হয় না।
৯। পেডালফার মাটির আক্ষরিক অর্থ- Pedalfer = Ped + Al + Fer অর্থাৎ, মৃত্তিকা + অ্যালুমিনিয়াম + লৌহ অক্সাইড। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটির আক্ষরিক অর্থ- Pedocal = Ped + Cal অর্থাৎ, মৃত্তিকা + ক্যালসিয়াম কার্বনেট।
১০। পেডালফার মাটি অনুর্বর। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটি অপেক্ষাকৃত ঊর্বর।
১১। পেডালফার মাটির উদাহরণ হল- ল্যাটেরাইট, পডজল ইত্যাদি হল। অন্যদিকে, পেডোক্যাল মাটির উদাহরণ হল-চারনোজেম, সিরোজেম ইত্যাদি।