কর্মী ব্যবস্থাপনা (Personnel management):
সাধারণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের যে অংশ প্রতিষ্ঠানের মানবিয় দিক নিয়ে কাজ করে তাকে কর্মী ব্যবস্থাপনা বলে। কর্মক্ষেত্র এবং সত্তার সাথে তাদের সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত এমন দিকনির্দেশনাটি পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট হিসাবে পরিচিত। কর্মী পরিচালনার সুযোগ সীমিত এবং একটি বিপরীতমুখী পদ্ধতির রয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের হাতিয়ার হিসাবে দেখা হয়। কর্মীদের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কর্মীদের সুযোগ এবং লক্ষ্য, কৌশল, সংস্থার উন্নয়নের শর্তগুলি আনয়ন করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মানব শক্তির উপর একটি লক্ষ্যযুক্ত প্রভাব।
ম্যানেজমেন্টের মূল লক্ষ্যটি মানব সম্পদগুলির কার্যকরী এবং পরিকল্পিত ব্যবহার, পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার উন্নতির ফলে যাদের তারা সরাসরি প্রভাবিত করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমগুলির মধ্যে একটি হল একটি নিয়ম হিসাবে কর্মীদের ব্যবস্থাপনা, ব্যবস্থাপনাটির ধারণার উপর ভিত্তি করে – একটি সাধারণকরণ জমা (বিকল্পভাবে ঘোষিত) প্রতিষ্ঠানের একজন ব্যক্তির স্থান সম্পর্কে। সংগঠনের কর্মীদের ব্যবস্থাপনা ধারণাটির ভিত্তি বর্তমানে কর্মচারীর ব্যক্তিত্বের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা, তার প্রেরণামূলক ইনস্টলেশনের জ্ঞান, তাদের গঠন করার ক্ষমতা এবং প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হওয়া কাজ অনুসারে সরাসরি কাজ করে।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Human Resource Management):
সার্বজনীন মৌলিক ব্যবস্থাপনার যে সকল অংশ রয়েছে তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যবহৃত অংশ হলো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। সাধারণ অর্থে শিল্প কারখানায় ও অফিসে কর্মরত শ্রমিক কর্মীদের ব্যবস্থাপনাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলে। অন্যভাবে বলা যায় ব্যবস্থাপনার যে অংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত মানবীয় উপাদান সংক্রান্ত প্রশাসন পরিচালনা করা হয় তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামে পরিচিত। পূর্বে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মী ব্যবস্থাপনা (Personnel management),শ্রম ব্যবস্থাপনা (Labour management),কর্মী প্রশাসন (Personnel adminstration), শিল্প ব্যবস্থাপনা (Industrial management)ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হত। উৎপাদনশীল শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা সেবা পরিবেশনকারী (যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লাব, সংঘ, সমিতি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানসমূহ দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনে নির্বাহী ও শ্রমিক কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বদলী, পদোন্নতি, অবসরদান ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করতে হয়।
আর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রম শক্তি তথা মানবীয় উপাদান সংক্রান্ত এসকল নানাবিধ কাজের সমষ্টিই হচ্ছে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। এই শ্রমিক কর্মীই হলো একমাত্র উপাদান যারা সেবা কার্য ও উৎপাদনশীল কাজে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এদের উপর প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অবনতি অনেকটায় নির্ভরশীল।
কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পার্থক্য:
সাধারণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের যে অংশ প্রতিষ্ঠানের মানবিয় দিক নিয়ে কাজ করে তাকে কর্মী ব্যবস্থাপনা বলে। কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। কর্মী ব্যবস্থাপনা মৌলিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সংযোজন হয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পরিচিতি লাভ করে। একে অনেকটা মধ্যযুগীয় মতবাদ হিসেবে বলা যায়। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী ব্যবস্থাপনার আধুনিক মতবাদ হিসেবে বিংশ শতাব্দী থেকে আত্মপ্রকাশ ঘটে।
২। কর্মী ব্যবস্থাপনা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত করা হয়। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত করা হয়।
৩। কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কল্যাণকল্পে মধ্যস্থতাকারী ও সমাধানকারী হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয় বরং নির্বাহী হিসেবে জনশক্তির সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের করে থাকে।
৪। কর্মী ব্যবস্থাপনা অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের মূল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকে।
৫। কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের উৎপাদনের একটি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের সম্পদ ও সামাজিক পুঁজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৬। কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের আনুগত্যশীল রেখে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। অন্যদিকে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের ক্ষমতায়ন ও প্রতিশ্রতিবদ্ধতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।