খেলা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য

একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের খেলা, যা খেলার সাথে কাজের বৈশিষ্ট্যও বহন করতে পারে। খেলা ও কাজের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হলো তাদের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া, এবং ফলাফল। নিচে খেলা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

খেলা (Play) :
খেলাধুলা হলো এমন একধরনের কাজ যা বিনোদনের জন্য অথবা কখনো কখনো জ্ঞান অর্জনের সরঞ্জাম হিসাবে গণ্য করা হয়। এটা বিনোদনের একটি স্বতন্ত্র মাধ্যম যা শুধু আনন্দ উপভোগের জন্য অথবা পুরস্কারের জন্য করা হয়। খেলাধুলা সাধারণত কাজের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। এসব মূলত ঐতিহ্য, সৌন্দর্যবোধ ও মিত্রতা রক্ষার্থে আয়োজন করা হয়। তবে কিছু খেলা কাজ বা পেশার ভেতর পরে। যে‍‍‍‍মন: পেশাদার ক্রীড়াবিদ যারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে অন‍্যদের আনন্দ দেয়।‌‌

খেলাধুলা দুই ধরনের হয়, একটি হলো কাজের মাধ্যমে খেলা অন্যটি হলো বুদ্ধির মাধ্যমে খেলা। যেমন: ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি, কুস্তি, উটের দৌড়, ঘুড় দৌড়, তীর নিক্ষেপ, মার্বেল, লক্ষ্যে আঘাত, গাণিতিক গেম, বৈজ্ঞানিক গেম, যৌক্তিক গেম, কৌশলগত বা কূটনৈতিক গেম এবং মাহজং, পাজ্ল ও ভিডিও গেম ইত‍্যাদি। ‍‍‌‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ত‌বে আরো একধরনের খেলা রয়েছে যাকে বলে ভাগ‍্যের খেলা বা জুয়া খেলা। যেমন: দাবা, লুডু, চরকি এবং লটারি ইত্যাদি।

কাজ (Work) :
একটি বস্তুর উপর কোনো বল ক্রিয়া করায় যদি বলের অভিমুখে বস্তুটির কিছু সরণ ঘটে তাহলে ক্রিয়াশীল বল কাজ করেছে বলে ধরা হয়। অর্থাৎ কোন একটি বস্তুকে বল প্রয়োগ করলে বলের দিকে যে সরণ ঘটে তাকে কাজ বলে। এখন কাজ আবার দু প্রকার। ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক।

ধনাত্মক কাজের উদাহরণ উপরের টাই যথেষ্ট। আর ঋণাত্মক কাজ হচ্ছে যে দিকে বল প্রয়োগ করা হল তার বিপরীতে দিকে যদি কাজ হয় সেক্ষেত্রে। যেমন- আমি শুণ্যে একটা বস্তু নিক্ষেপ করলাম এটা একটা ঋণাত্মক কাজ। কারণ পৃথিবী তাকে নিচের দিকে টানছে। অথবা, আপনাকে কেউ ধাক্কা মারলো সে ধাক্কা খেয়ে সেইই পরে গলে সেটাও ঋণাত্মক কাজ তার কর্তৃক।

খেলা ও কাজের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। খেলার সংজ্ঞায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নান (Nunn) বলেছেন –খেলা হল শিশুর সৃজনশীল কাজের বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে, কাজ হল এমন একটি সক্রিয়তা যেটি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যেটি ব্যক্তির জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আসে।

২। খেলার উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করা। অন্যদিকে, কাজের উদ্দেশ্য হল অর্থ উপার্জন বা কোনো কিছু উৎপাদন করা। অর্থাৎ কাজে কিছু প্রত্যাশা থাকে।

৩। খেলার বৈশিষ্ট্য হল – জন্মগত প্রবণতা, স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ ও আনন্দদায়ক প্রভৃতি। অন্যদিকে, কাজের বৈশিষ্ট্য হল – বস্তুধর্মী উদ্দেশ্য, আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন মুখী প্রভৃতি।

৪। খেলার কিছু পূর্বনির্ধারিত নিয়মকানুন থাকে। কিন্তু এগুলি অনেকাংশে নমনীয় প্রকৃতির। অন্যদিকে, কাজের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন পূর্বনির্ধারিত ও কঠোর প্রকৃতির হয়ে থাকে।

৫। খেলা হল সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রকৃতির। অন্যদিকে, কাজ হল বস্তুভিত্তিক প্রকৃতির।

৬। খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন সম্ভব হয়ে থাকে। অন্যদিকে, কাজের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির উৎপাদন বা অর্থনৈতিক দিকে বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

৭। খেলার মধ্য দিয়ে শিশু ক্লান্তি অনুভব করে না। অন্যদিকে, কাজের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা শিশু সহজেই ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন।

৮। খেলার বিষয় যেকোনো হতে পারে। অন্যদিকে, কিন্তু কাজের বিষয় নির্দিষ্ট থাকে।

৯। শিশুরা অনেকক্ষণ সময় ধরে খেলাধুলা করতে পারে। অন্যদিকে, শিশুরা কাজ অনেকক্ষণ ধরে করতে পারে না। কারণ কাজে সহজেই ক্লান্তি আসে।

১০। খেলার ক্ষেত্রে কোনো চাহিদা থাকে না। অর্থাৎ খেলার সময় ফললাভের প্রত্যাশা থাকে না। এখানে আনন্দ হল মুখ্য বিষয়। অন্যদিকে, কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রত্যাশা বা ফললাভ পরিলক্ষিত হয়। কারণ কোনো কিছু পাওয়ার আশায় বা ফল লাভের আশায় ব্যক্তি কাজ করে থাকে।