ছড়া সংজ্ঞাঃ
ছড়া মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাধারণত স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এটি সাহিত্যের একটি প্রচীন শাখা। যিনি ছড়া লেখেন তাকে ছড়াকার বলা হয়। ‘ছেলেভুলানো ছড়া’, ‘ঘুম পাড়ানি ছড়া’ ইত্যাদি ছড়া দীর্ঘকাল যাবৎ প্রচলিত। প্রাচীনকাল থেকে ইংরেজি ভাষায় ননসেন্স রাইম প্রচলিত রয়েছে কারণ ছড়ার প্রধান দাবি ধ্বনিময়তা ও সুরঝংকার, অর্থময়তা নয়। প্রাচীন যুগে ‘ছড়া’ সাহিত্যের মর্যাদা না পেলেও বর্তমানে সে তার প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখনও অনেকেই ছড়া সাহিত্যকে শিশু সাহিত্যেরই একটি শাখা মনে করেন কিংবা সাহিত্যের মূলধারায় ছড়াকে স্বীকৃতি দিতে চান না। কেউ কেউ ছড়াকে কবিতা বলার পাশাপাশি আধুনিক গদ্য কবিতার যুগে এসব মিলযুক্ত কবিতা বা পদ্যের অবস্থানকে হালকা করে দেখেন। তবে পদ্য এবং ছড়ার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে- পদ্যের বক্তব্য সহজবোধ্য ও স্পষ্ট কিন্তু ছড়ায় রহস্যময়তা থাকে।
কবিতা সংজ্ঞাঃ
কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস— যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রুপ এবং তা অতি অবশ্যই উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ। পৃথিবী নামক গ্রহের তাবৎ বিষয়কে পুজি করে কবিতা ফলত সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। কাঠামোর বিচারে কবিতা নানা রকম। যুগে যুগে কবিরা কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছেন। কবিতা শিল্পের মহত্তম শাখা পরিগণিত।
ছড়া ও কবিতার মধ্যে পার্থক্যঃ
কবিতা ও ছড়ার মধ্যে পার্থক্য হলো কবিতাতে শিক্ষামূলক অনেক কিছু থাকে কিন্তু ছড়ায় শিক্ষামূলক তেমন কিছু থাকে না। নিচে ছড়া ও কবিতার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-
১। ছড়া মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাধারণত স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। অন্যদিকে পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস— যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রুপ।
২। যিনি ছড়া লেখেন তাকে ছড়াকার বলা হয়। অন্যদিকে যিনি কবিতা লেখেন তাকে কবি বলা হয়।
৩। কবিতায় একটি বাস্তবিক কাহিনী থাকে। অন্যদিকে ছড়ায় বাস্তবিক কাহিনী থাকে না। এটা বেশিরভাগ অবাস্তবিক।
৪। কবিতায় ভাষা সবসময় সহজবোধ্য ও সুস্পষ্ট হয়। অন্যদিকে ছড়ার ভাষায় রহস্যময়তা থাকে,যা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায়।
৫। ছড়া চারপাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংঘটিত অসংগতিগুলোর ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কৌতুক বা কটাক্ষের মাধ্যমে উদ্ভট বা নাটকীয় উপস্থাপিত হবে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের মতে- রূপের মধ্যে অরূপের সন্ধানই কবিতা।