জনসংখ্যা ভূগোল ও জনবিজ্ঞান এর মধ্যে পার্থক্য

জনসংখ্যা ভূগোল:

The Dictionary of Human Geography (ed. by R. J. Johnston) এর মতে জনসংখ্যা ভূগোল হলো ‘‘The study of the ways in which spatial variations and growth of population are related to the nature of place.’’ জনসংখ্যা ভূগোল মানুষের ভূগোলের একটি শাখা যা মানুষের বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তাদের স্থানিক বিতরণ এবং ঘনত্ব উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়।

এই বিষয়গুলি অধ্যয়ন করতে, জনসংখ্যার উপাত্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির এবং জনসংখ্যার হার, জনসাধারণের আন্দোলন সময়ের সাথে সাথে সাধারণ নিষ্পত্তির নমুনা এবং অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন পেশা এবং কীভাবে মানুষ একটি স্থান ভৌগলিক চরিত্র গঠন করে তা পরীক্ষা করে। জনসংখ্যা ভূগোল জনসংখ্যাতাত্ত্বিক (জনসংখ্যা পরিসংখ্যান এবং প্রবণতা অধ্যয়ন) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

জনবিজ্ঞান:

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত অনুযায়ী ১৬ কোটি ৫৭ লাখ। এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১১১৬ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০–২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৬%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর।জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি।

বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা বিভিন্ন উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতি গুলোর মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য। দেশের ৯৮% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সরকারী কাজ কর্মে ইংরেজিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ১৯৮৭ সাল হতে কেবল বৈদেশিক যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কর্মকান্ডে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (৯০.৪%)।এরপরেই রয়েছে হিন্দু ধর্ম(৮.৫%), বৌদ্ধ (০.৬%), খ্রীস্টান (০.৩%) এবং অন্যান্য (০.১%)।’মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী। সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে দারিদ্র বিমোচন ও জনসাস্থ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে।

তবে সরকারের নেয়া নানা কর্মসূচীর ফলে দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচী নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছে।

জনসংখ্যা ভূগোল ও জনবিজ্ঞান এর মধ্যে পার্থক্য:

রাজনৈতিক এবং ভৌগলিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করে তাকে জনবিজ্ঞান বলে। জনসংখ্যা ভূগোল ও জনবিজ্ঞান এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। সাধারণভাবে ভূগোলের যে শাখায় জনসংখ্যার বণ্টন,ঘনত্ব ,জন্মশীলতা, মরণশীলতা, অভিপ্রয়ান, নারীপুরুষ অনুপাত, বয়স কাঠামো, পেশা ,শিক্ষা , খাদ্য ,পুষ্টি ,ইত্যাদি জন সংখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ের স্থানিক পার্থক্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে তাকে জনসংখ্যা ভূগোল বলে।

অন্যদিকে যে বিজ্ঞান জনসংখ্যার অত্যাবশ্যকীয় চলকসমুহ যেমন – জনসংখ্যার মৃত্যু ,স্থানান্তর , বিবাহ,সামাজিক গতিশীলতা, এবং জনসংখ্যার আকৃতি ,প্রকৃতি,কাঠামো, উন্নয়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং ভৌগলিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করে তাকে জনবিজ্ঞান বলে।

২। ১৯৫৩ সালে ট্রি অয়ারথা এর নেতৃত্বে জনসংখ্যা ভূগোল নতুন বিষয় হিসেবে পরিণত হয় । ১৯৪৮ সালে জনবিজ্ঞানীদের মধ্যে জনবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয় ।

৩। জনসংখ্যার অতীত ,বর্তমান, ভবিষ্যৎ অবস্থার বিভিন্ন আলোচনার বিষয় গুলো ছক,নকশা এবং আঞ্চলিক মানচিত্রের সাহায্যে সহজে বোধগম্য করে তোলে। জনবিজ্ঞান জনসংখ্যা কে নিয়ে আলোচনা করে যা পরিসংখ্যান গত মাত্রা ছাড়া অন্য কিছু উপস্থাপন করেনা।

৪। জনসংখ্যা ভূগোল জনসংখ্যার মানচিত্র নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে জনবিজ্ঞান জনসংখ্যাকে নিয়ে আলোচনা করে।

৫। তথ্যের অর্থবহ উপস্থাপন তথা স্থানিক পার্থক্যের ভিত্তি তথ্য বিশ্লেষণ করা জনভূগোলবিদের কাজ। অন্যদিকে জনবিজ্ঞানীগন তথ্য সরবরাহ করে থাকেন।

৬। জনসংখ্যার উন্নতিতে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদানগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল জনভূগোলবিদের কাজ। অন্যদিকে জনবিজ্ঞানীগন শুধু বর্তমান ক্রিয়াশীল নিয়ামক নিয়ে আলোচনা করে ।

৭। জনসংখ্যা ভূগোল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আলোচনা করে যা মানবজীবনের উপর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে জনমিতি শুধু জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করে।

৮। জনসংখ্যা ভূগোলবিদরা কোনো স্থানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং এর কারণ নির্ণয় করে। অন্যদিকে জনবিজ্ঞানীগন জনসংখ্যার জন্ম ও প্রবৃদ্ধির হার নির্ণয় করে।

৯। জনসংখ্যা ভূগোল জনসংখ্যার অতীত ও বর্তমান আন্তঃসম্পর্কের তুলনামুলক আলোচনা ও ক্রিয়াশীল নিয়ামক গুলোর ভবিষ্যৎ পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করে। অন্যদিকে জনমিতি কেবল জনসংখ্যার পরিসংখ্যানগত উপাত্তের পার্থক্য ও জনসংখ্যার ভবিষ্যদ্বানী প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়।