ইতিবাচক অর্থনীতি (Positive Economics)ঃ
দু’টো বক্তব্য উল্লেখ করা হলো: (i) গত বছরের তুলনায় এ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি। (ii) যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির হার পশ্চিম জার্মানির তুলনায় বেশি। এই বক্তব্য দুটো বাস্তব তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব। যেসব বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব, তাদেরকে ইতিবাচক বক্তব্য বলে। এ জাতীয় বক্তব্য ইতিবাচক অর্থনীতির আওতাভুক্ত। ইতিবাচক অর্থনীতি কিভাবে করা যায়। বা কী কারণে করা হবে- এ জাতীয় বক্তব্য পর্যালোচনা করে। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও বাস্তব তথ্যের ওপর ইতিবাচক অর্থনীতি নির্ভর করে। ইতিবাচক বক্তব্য সরল বা জটিল হতে পারে এবং এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কোনো মতভেদ দেখা দিলে তা বাস্তব তথ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ ও বর্জন করা সম্ভব। যা বিদ্যমান এবং যা ঘটেছে কেবল তারই আলোচনা করা ও কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করা ইতিবাচক অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য।
নীতিবাচক অর্থনীতি (Normative Economics)ঃ
কোনটি করা উচিত বা কোনটি করা উচিত নয় এ ধরনের আদর্শমূলক বক্তব্যকে নীতিবাচক বক্তব্য বলে। যেমন সম্পদের অপচয় রোধে তার সুষ্ঠু বণ্টন হওয়া উচিত। এটি একটি নীতিবাচক বক্তব্য। নীতিবাচক বক্তব্য সাধারণত ঔচিত্যের মাপকাঠিতে বিচার করা হয়। ইতিবাচক বক্তব্যের মতো এ ধরনের বক্তব্য বাস্তব তথ্য দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না। ফলে নীতিবাচক বক্তব্যে মতভেদ দেখা দিলে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দ্বারা তা গ্রহণ বা বর্জন করা যায় না। অনেক সময় ইতিবাচক বক্তব্য থেকে নীতিবাচক বক্তব্য বেরিয়ে আসতে পারে। অনুরূপভাবে, নীতিবাচক বক্তব্য থেকেও অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক বক্তব্য বের হয়ে আসতে পারে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে অর্থনীতির যে শাখায় আদর্শগত মূল্যায়নের ভিত্তিতে নীতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি (Normative Economics) বলে। একে অনেক ক্ষেত্রে কল্যাণ অর্থনীতি (walfare Economics) হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যঃ
১। উৎপাদন, দাম, বিক্রয়, নিয়োগ, আয় এসব পর্যবেক্ষণমূলক চলক এর উপর অর্থনৈতিক নীতিসমূহের পরিবর্তন কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা বিশ্লেষণ করাই হচ্ছে ইতিবাচক বিশ্লেষণ। অর্থাৎ ঘটনার বিবরণকে ইতিবাচক বিশ্লেষণ বলা হয়। এই বিশ্লেষণে নির্ধারণ করা হয় পরিকল্পনার পরিবর্তনের ফলে কে লাভবান হয় বা কে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইতিবাচক বিশ্লেষণের বক্তব্য হচ্ছে “যদি এটা হয় তাহলে এটা হবে”। উদাহরণস্বরূপ- যদি পেঁয়াজ আমদানীর উপর কর আরোপ করা হয় তাহলে পেঁয়াজ এর দাম বেড়ে যাবে। সরকারী বিভিন্ন নিয়মনীতির পরিবর্তনের ফলস্বরূপ দাম, আয়, সুদের হার, মজুরী ইত্যাদির যে পরিবর্তন ঘটে তার প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা ইতিবাচক বক্তব্যকে গ্রহণ করতে পারি কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। ইতিবাচক বিশ্লেষণে বক্তার মূল্যবোধ কিংবা পছন্দ প্রতিফলিত হয় না। ইতিবাচক বিশ্লেষণ ফালাফল মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয় না।
উদাহরণস্বরূপ- সরকারী বিভিন্ন কল্যাণ কার্যক্রমের ইতিবাচক বিশ্লেষণ দেখায়, এসব কার্যক্রম থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং জাতীয় উৎপাদনের উপর কল্যাণ কার্যক্রম কি প্রভাব ফেলে। কিন্তু এইসব কার্যক্রম ভাল না মন্দ, উচিত না অনুচিত তা নির্ধারণ করে না। অন্যদিকে নীতিবাচক বিশ্লেষণে কোন কাজের ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত এ সমস্ত দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। নীতিবাচক বিশ্লেষণের বক্তব্য হচ্ছে, “এটা হওয়া উচিত / সেটা করা উচিত”। এই বিশ্লেষণে বক্তার মূল্যবোধ কিংবা পছন্দ প্রতিফলিত হয়।
২। বহির্বিশ্বে খরচ বা বেনিফিট যা তৃতীয় পক্ষকে প্রভাবিত করে যারা বাজারে পণ্য ও সেবার পণ্য বা সেবার ব্যবহারে অংশগ্রহণকারী নয়। একটি ইতিবাচক বহির্বিশ্বে তার নাম সুপারিশ করা হয় এটি একটি সুবিধা যা তৃতীয় পক্ষ ক্রেতার এবং বিক্রেতার মধ্যে লেনদেন, উত্পাদন বা খরচের ফলে উপভোগ করে।
অন্যদিকে, নেতিবাচক বহির্বিশ্বে এমন একটি লেনদেনের ফলে তৃতীয় পক্ষের কোন সম্পর্ক নেই এমন তৃতীয় পক্ষের খরচ বহন করতে হবে। নেতিবাচক এবং ইতিবাচক বহিরাগত উভয়ই অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ফলস্বরূপ ঘটে এবং একটি অর্থনীতিতে ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন প্রযুক্তির গবেষণা ইত্যাদির মাধ্যমে ইতিবাচক বহির্ভূত অংশগুলি বৃদ্ধি করার সময়ও নিয়মাবলী এবং দণ্ডের মাধ্যমে তার নেতিবাচক বাহ্যিকতাগুলি কমাতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
৩। ইতিবাচক অর্থনীতির বিশ্লেষণে আমরা বিভিন্ন কার্যপদ্ধতিগুলো কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করি।অপরদিকে নীতিবাচক বিশ্লেষণে আমারা বোঝার চেষ্টা করি এই পদ্ধতিগুলো অর্থব্যবস্থার জন্য সঠিক নাকি বেঠিক।