পেশা (Profession):
একটি পেশা হল কাজের একটি ক্ষেত্র যা সফলভাবে পেশাদারিকৃত হয়েছে। এটিকে ব্যক্তি, পেশাদারদের একটি সুশৃঙ্খল গোষ্ঠী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, যারা নৈতিক মান মেনে চলে এবং যারা নিজেদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখে এবং গবেষণা, শিক্ষা এবং শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ব্যাপকভাবে স্বীকৃত সংস্থায় বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতার অধিকারী হিসাবে জনসাধারণের দ্বারা গৃহীত হয়। একটি উচ্চ স্তরে প্রশিক্ষণ, এবং যারা এই জ্ঞান প্রয়োগ করতে এবং অন্যদের স্বার্থে এই দক্ষতাগুলি অনুশীলন করতে প্রস্তুত। পেশাগত পেশাগুলি বিশেষ শিক্ষাগত প্রশিক্ষণের উপর প্রতিষ্ঠিত, যার উদ্দেশ্য হল অন্যদেরকে উদ্দেশ্যহীন উদ্দেশ্যমূলক পরামর্শ এবং পরিষেবা সরবরাহ করা, সরাসরি এবং নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের জন্য, সম্পূর্ণরূপে অন্যান্য ব্যবসায়িক লাভের প্রত্যাশা থেকে। মধ্যযুগীয় এবং প্রাথমিক আধুনিক ঐতিহ্য শুধুমাত্র তিনটি পেশাকে স্বীকৃত করেছে: দেবত্ব, চিকিৎসা এবং আইন, যেগুলোকে বলা হতো শিক্ষিত পেশা। একটি পেশা একটি বাণিজ্য নয় এবং একটি শিল্প নয়।
কিছু পেশার মর্যাদা এবং ক্ষমতার সামান্য পরিবর্তন হয়, কিন্তু তাদের প্রতিপত্তি সাধারণত সময়ের সাথে সাথে স্থিতিশীল থাকে, এমনকি যদি পেশায় আরো প্রয়োজনীয় অধ্যয়ন এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। স্থাপত্যের মতো শৃঙ্খলাগুলি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে রূপান্তরিত হয়েছে, এখন তাদের সাথে সমানভাবে দীর্ঘ সময়ের অধ্যয়ন যুক্ত রয়েছে।
পেশার সংজ্ঞায় এ. ই. বেন (A. E. Benn) বলেছেন যে, “পেশা হল অন্যকে নির্দেশনা, পরিচালনা বা উপদেশ প্রদানের এমন এক ধরণের দক্ষতা, যার জন্য বিশেষ জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হয়।”
উইলবার্ট ই মোর (Wilbert E. More) তিনি তাঁর The Profession: Roles and Rules’ বইতে বলেছেন, “পেশা হল একটি সার্বক্ষণিক কর্ম, সেবাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগীদের নিয়ে আলাদা পরিচিতি, বিশেষায়িত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, সেবামুখিতা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্বাতন্ত্র্যবোধ।”
বৃত্তি (Scholarship):
মানুষ তার জীবনধারণের জন্য যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে,তাকে বৃত্তি বলা হয়। যদি বছরের শেষে টাকা জমা দেওয়া হয় বা পাওয়া যায় তাকে স্বাভাবিক বা সাধারণ বৃত্তি বলে। অর্থগত দিক পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, পেশার থেকেও বৃত্তির অর্থের পরিধি অনেক ব্যাপক। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয়টি সীমাবদ্ধ হচ্ছে জীবিকার উপায় নিয়ে। যদি এই বিবেচনায় ‘বৃত্তি’ এবং পেশা’ সমার্থক হলেও আসলে সেটা সকল ক্ষেত্রে ঠিক নয়। পেশার সাথে থাকে দক্ষতা, পক্ষান্তরে বৃত্তির সাথে স্বভাব এবং আচরণের থাকে নিবিড় একটি সম্পর্ক। যেমন: চৌর্যবৃত্তি ও ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি।
পেশা এবং বৃত্তি এর মধ্যে পার্থক্যঃ
পেশাও একটি বৃত্তি। পেশা এবং বৃত্তিকে অর্থগত ভাবে ভিন্ন ভিন্ন করা হলেও মূলত তাদের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য পাওয়া যায়। নিম্নে উভয়ের পার্থক্য গুলি তুলে ধরা হলো-
১। একটি পেশা হল কাজের একটি ক্ষেত্র যা সফলভাবে পেশাদারিকৃত হয়েছে। অন্যদিকে, মানুষ তার জীবনধারণের জন্য যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে,তাকে বৃত্তি বলা হয়।
২। প্রত্যেক পেশার নিজস্ব জ্ঞান ভান্ডার রয়েছে। যেমন-ডাক্তারি। অন্যদিকে, বৃত্তির কোন সুসংগঠিত জ্ঞানভান্ডার নেই। এর জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। যেমন-কুলি।
৩। পেশাদার ব্যক্তিকে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। অন্যদিকে, বৃত্তির জন্য তাত্ত্বিক শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না।
৪। পেশাগত কাজ অবশ্যই প্রযুক্তিসম্পন্ন। অন্যদিকে, বৃত্তের কাজ প্রযুক্তি সম্পন্ন হতেও পারে আবার নাও পারে।
৫। পেশার উন্নয়ন এবং স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি পেশারই পেশাগত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যদিকে, বৃত্তির এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
৬। পেশাদার কর্মীদের নিজ নিজ পেশায় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। জবাবদিহিতাও রয়েছে। অন্যদিকে, বৃত্তিধারী ইচ্ছামতো কাজ করতে পারে, তার জবাবদিহিতা নেই।