গদ্য ও পদ্যের মধ্যকার পার্থক্য —- গদ্য ও পদ্য হচ্ছে সাহিত্যের বাহন । ইংরেজ কবি কোলরিজের মতে শব্দের সুনিয়ন্ত্রিত বিন্যাসই গদ্য আর যথোপযোগী শব্দের অবশ্যম্ভাবী বিন্যাসই পদ্য । শব্দ ভাবের বাহন , শব্দ বাঙ্ময় , শব্দ অর্থসমন্বিত , চিত্রাত্মক ও ব্যঞ্জনাময় । এই শব্দ যখন অনুভূতি-বিগলিত গীতি-মূর্চ্ছনায় সাবলীলস্রোতে অপরিবর্তনীয় ভাষার আবেগে কম্পিত হয়ে উঠে তখনই সাহিত্য পদ্য হয়ে উঠে । গদ্য মানুষের ভাবনা চিন্তার বুদ্ধিনিষ্ঠ প্রকাশ আর পদ্য হচ্ছে ভাষার অতীত ব্যঞ্জনাত্মক প্রকাশ । তাই গদ্য ও পদ্যের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা নিচে দেখানো হলো-
গদ্য সংজ্ঞা
গদ্য হলো মানুষের কথ্য ভাষার লেখ্যরূপ। এর বিপরীত হলো পদ্য বা কাব্য। গদ্যের প্রাথমিক ব্যবহার চিঠিপত্র লেখায়, দলিল-দস্তাবেজ প্রণয়নে এবং ধর্মীয় গ্রন্থাদি রচনায়। বাংলা পদ্যের ইতিহাস শুরু হয়েছে চর্যাপদ থেকে; কিন্তু গদ্যের ইতিহাস ততটা প্রাচীন নয়। গদ্যের চারিত্র্য নির্ভর করে শব্দের ব্যবহার এবং বাক্যে পদ (শব্দ) স্থাপনার ক্রমের ওপর। আধুনিক যুগে গদ্যের প্রধার দুটি ব্যবহার হলো কথাসাহিত্য এবং প্রবন্ধ।
কবিতা সংজ্ঞা
কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস— যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রুপ এবং তা অতি অবশ্যই উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ। পৃথিবী নামক গ্রহের তাবৎ বিষয়কে পুজি করে কবিতা ফলত সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। কাঠামোর বিচারে কবিতা নানা রকম। যুগে যুগে কবিরা কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছেন। কবিতা শিল্পের মহত্তম শাখা পরিগণিত।
গদ্য ও পদ্যের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। গদ্য সাহিত্যের একটি প্রত্যক্ষ ফরোয়ার্ড ফর্ম, যেখানে লেখক তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিকে এক মজাদার উপায়ে প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে কবিতা হ’ল সাহিত্যের সেই রূপ যা তীব্র অভিজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কবি একটি অনন্য শৈলী এবং ছন্দ ব্যবহার করে।
২। ভাষা গত দিক থেকে গদ্য স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। পক্ষান্তরে ভাষা গত দিক থেকে পদ্য উদ্বেগজনক বা সজ্জিত।
৩। গদ্যের প্রকৃতি হলো ব্যবহারিক। পক্ষান্তরে পদ্যের প্রকৃতি হলো কল্পনাপ্রবণ।
৪। গদ্যের উদ্দেশ্য হলো তথ্য সরবরাহ করতে বা একটি বার্তা জানাতে। পক্ষান্তরে পদ্যের উদ্দেশ্য হলো আনন্দ করা বা চিত্তবিনোদন করা।
৫। গদ্যের জন্ম মস্তিষ্কে। পক্ষান্তরে পদ্যের জন্ম হৃদয়ে ।
৬। গদ্য হাটে – পদ্য উড়ে , গদ্য জ্ঞান আর পদ্য হচ্ছে প্রজ্ঞা ।