সাইকোলজিস্ট (Psychologist):
একজন মনোবিজ্ঞানী হলেন একজন পেশাদার যিনি মনোবিজ্ঞান অনুশীলন করেন এবং মানসিক অবস্থা, উপলব্ধিমূলক, জ্ঞানীয়, মানসিক এবং সামাজিক প্রক্রিয়া এবং আচরণ অধ্যয়ন করেন। তাদের কাজ প্রায়ই পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, এবং ব্যাখ্যা জড়িত কিভাবে ব্যক্তি একে অপরের সাথে এবং তাদের পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
মনোবিজ্ঞানীরা সাধারণত মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, তারপরে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডক্টরেট অর্জন করেন। মানসিক চিকিত্সক এবং মানসিক নার্স-অ্যাকটিশনারের বিপরীতে, মনোবিজ্ঞানীরা সাধারণত ওষুধ লিখে দিতে পারেন না তবে, এখতিয়ারের উপর নির্ভর করে, অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ সহ কিছু মনোবিজ্ঞানী ওষুধ লিখে দেওয়ার লাইসেন্স পেতে পারেন; যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা স্নাতক ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির চেয়ে আলাদা হতে পারে।
মনোবৈজ্ঞানিকরা একটি মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, স্কোরিং, ব্যাখ্যা এবং প্রতিবেদনে ব্যাপক প্রশিক্ষণ পান, যখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় প্রশিক্ষিত হন না। মনোবৈজ্ঞানিকরাও প্রশিক্ষিত এবং প্রায়শই অনেক মানসিক ব্যাধির লক্ষণগুলির উন্নতির জন্য এক বা একাধিক সাইকোথেরাপিতে বিশেষজ্ঞ হন, যার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি এবং খাওয়ার ব্যাধিগুলির চিকিৎসার জন্য কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়। মনোবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে চিকিৎসা পৃথক বা দলগত হতে পারে। জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি হল একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত, ভালভাবে অধ্যয়ন করা এবং উচ্চ কার্যকারিতা সাইকোথেরাপি যা মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা অনুশীলন করা হয়। মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং লোকেদের সাথে কাজ করতে পারেন, যেমন স্কুল, কারাগার, একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে, একটি কর্মক্ষেত্রে বা একটি ক্রীড়া দলের সাথে।
সাইকোথেরাপিস্ট (Psychotherapist):
মন এবং শরীর এই দুই মিলে হচ্ছে মানুষ। শরীরবিহীন মানুষ যেমন অসম্ভব তেমনি মনবিহীন মানুষও অসম্ভব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মন থাকে কোথায়? মন থাকে মাথায় বা মস্তিষ্কে। যদিও ব্রেইন বা মস্তিষ্কই মন নয় কিন্তু মনের অস্তিত্ব প্রকাশিত হয় মস্তিষ্কের বিভিন্ন রকম নিউরোনাল সার্কিট, নিউরোট্রান্সমিটার, নিউরোমডিউলেটর, হরমোনসহ নানাবিধ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে।
শরীরের যেমন অসুখ হয় তেমনি মনেরও নানারকম অসুখ হয়।
তবে শরীরের অসুখের চিকিৎসা এবং মনের অসুখের চিকিৎসার মধ্যে কিছু গুণগত এবং পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। Mental disorder বা মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টরা যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন তার মধ্যে প্রধান দুটি পদ্ধতি হচ্ছে-
১. Pharmacotherapy ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা।
২. Psychotherapy (সাইকোথেরাপি)
ওষুধবিহীন Psychological method. আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে এ সাইকোথেরাপি। সাইকোথেরাপি হচ্ছে এক ধরনের মানসিক চিকিৎসা পদ্ধতি; যেখানে সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন পদ্ধতি বা Psychological method. ব্যবহার করে মানসিক ব্যধি বা Problem-এর চিকিৎসা করা হয়। তবে অনেকেই কাউন্সেলিং শব্দটির সঙ্গে পরিচিত।
যদিও সাধারণ মানুষ কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি একই অর্থে ব্যবহার করেন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে সাইকোথেরাপি এবং কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে কিছু গুণগত পার্থক্য রয়েছে; যা হোক সে ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্টের মধ্যে পার্থক্যঃ
দুটি পেশার বিচরণক্ষেত্রে অনেকটা সাদৃশ্য থাকলেও তাদের কাজের ধরন আলাদা। বিষয়বস্তুর মিল থাকলেও পেশা দুটির মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্টের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সাইকোলজিস্ট মূলত একজন মানুষ কীভাবে চিন্তা করে, তার আচরণের ধরন এবং অন্যের সাথে মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগের প্রক্রিয়া কি- সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করেন একজন সাইকোলজিস্ট। মানুষ কি, কিভাবে কেন চিন্তা করে- সাইকোলজিস্ট সেটাই জানতে চান।
অপরদিকে, সাইকোথেরাপিস্টের কাজ হচ্ছে একজন রোগী বা ক্লায়েন্ট কে মানসিক তথা আবেগতাড়িত সমস্যা বা বৈকল্য থেকে উত্তরণের জন্য সাহায্য করা। ক্ষেত্রবিশেষে সাইকোথেরাপিস্টকে কাউন্সেলর বলা হয়ে থাকে। সাইকোথেরাপিস্ট তার ক্লায়েন্ট কে মানসিক দক্ষতা অর্জন কিংবা অতীত অভিজ্ঞতার কষ্ট অতিক্রম করতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা এবং নির্দেশ দেন।
২। সাইকোলজিস্টদেরকে কাজের ধরণ অনুসারে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যারা ব্যবহারিক (Practical) কাজ করেন, তারা তাদের পেশাগত জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে রোগীদের সাথে কাজ করেন। যারা গবেষক (Researcher), তারা মানব মনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নতুন জ্ঞান বিযুক্ত করেন।
অন্যদিকে, সাইকোথেরাপিস্টের কাজকে অতি সরলীকরণ করলে বলা যায় তারা মনের ডাক্তার। বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাইকোথেরাপিস্টের কাছে আসেন চিকিৎসার জন্য। সাইকোথেরাপিস্ট এক বা একাধিক সেশনের মাধ্যমে ব্যক্তির সমস্যার কথা দ্বিধাহীনভাবে শোনেন, পরিশেষে তাকে সুস্থ করার জন্য পথ বাতলে দেন।
৩। সাইকোলজিস্ট মানসিক বিশ্লেষণ করে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন, কিন্তু কখনও ঔষধ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। ঔষধ দেয়ার জন্য যে লাইসেন্স প্রয়োজন, তা সাইকোলজিস্টের নেই।
অন্যদিকে, সাইকোথেরাপিস্ট রোগীর চিকিৎসায় কার্যকরী ঔষধ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। মানসিকভাবে সহায়তার পাশাপাশি একজন ডাক্তারের ন্যায় ঔষধের প্রেসক্রিপশন প্রদান করেন সাইকোথেরাপিস্ট।
৪। সাইকোলজিস্ট হবার জন্য সাইকোলজি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি প্রয়োজন। যেসব সাইকোলজিস্ট গবেষণায় মনোনিবেশ করেন, তারা সচরাচর একাডেমিক ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়েন। যারা ক্লিনিকাল কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তারা সাইকোলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
অন্যদিকে, সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট অথবা যে কোন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী সাইকোথেরাপিস্টের পেশায় আসতে পারেন। তবে এর জন্য সাইকোথেরাপিস্ট সংক্রান্ত বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। অনেক সাইকোথেরাপিস্ট আছেন, যাদের উপরিউক্ত কোন ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু তারা সাইকোথেরাপিস্ট বিষয়ে গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদপ্রাপ্ত সাইকোথেরাপিস্ট হয়েছেন।