মনোবিদ্যা এবং শিক্ষাবিজ্ঞান দুটি আলাদা কিন্তু সম্পর্কিত ক্ষেত্র। মনোবিদ্যা এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে মনোবিদ্যা এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
মনোবিদ্যা (Psychology) :
মনোবিজ্ঞান বা মনস্তত্ত্ববিদ্যা হল, মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়ন। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক ও ফলিত শাখা যাতে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়া ও আচরণসমূহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী মনোবিজ্ঞানকে “মানুষ এবং প্রাণী আচরণের বিজ্ঞান” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আবার অনেক বিজ্ঞানী একে সংজ্ঞায়িত করেছেন “আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান” হিসাবে।
শিক্ষাবিজ্ঞান (Pedagogy) :
শিক্ষাবিজ্ঞান হল জ্ঞানলাভের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং তাকে সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সব দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলি অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জনই হল শিক্ষা।
বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ’শাস’ ধাতু থেকে, যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে লাতিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে, যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা।
মনোবিদ্যা এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. মনোবিদ্যা হল একটি বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। শিক্ষাবিজ্ঞান শিক্ষাবিজ্ঞান একটি নিয়মনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
মনোবিদ্যা হল মানুষের মন, আচরণ, আবেগ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা। অন্যদিকে, শিক্ষাবিজ্ঞান হল শিক্ষা প্রক্রিয়া, শিক্ষার পদ্ধতি, শিক্ষার দর্শন এবং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা।
২. মনোবিদ্যার বিষয়বস্তু হল মানসিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎবাণীকরণ। অন্যদিকে, শিক্ষাবিজ্ঞানের বিষয় হল আচরণ বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎবাণীকরণ।
৩. মনোবিদ্যা একটি মৌলিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, শিক্ষাবিজ্ঞান মৌলিক বিজ্ঞান নয়।
৪. মনোবিজ্ঞান একটি শুদ্ধ বিজ্ঞান। অন্যদিকে, শিক্ষা বিজ্ঞান একটি ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিজ্ঞান।
৫. মনোবিদ্যা স্থান, সমাজ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিরপেক্ষ। অন্যদিকে, শিক্ষাবিজ্ঞান দেশ, সমাজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি ভেদে পরিবর্তনসাপেক্ষ।
৬. মনোবিদ্যার হলো চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কর্মক্ষেত্র, এবং বিভিন্ন ধরনের মানসিক থেরাপি। অন্যদিকে, শিক্ষাবিজ্ঞান হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষানীতি উন্নয়ন, পাঠ্যক্রম নির্মাণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতি উন্নয়ন।